অহংকার হলো চরম শত্রু(Ego is The Enemy) :-

 অহংকার আপনার প্রগতির পথে চরম  বাধা হয়ে দাঁড়ায় :-

যে কোনো ব্যক্তি জীবনে যাই করুন না কেন, বা যে লক্ষ্যেই জীবন কে চালিত করুন না কেন, প্রত্যেকের জীবনে তিনটি ধাপ থাকে।

1)প্রথম ধাপ হলো  Aspire-অর্থাৎ কোনো কাজ করার জন্যে বা কোনো লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্যে যে আকাঙ্খা জন্মায় সেই ধাপ। এই সময়টা হলো আপনার কোনো উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর সময়কাল অথবা গতিমান সময়কাল।

2) দ্বিতীয় ধাপ হলো আপনার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পরের ধাপ অথবা আপনি সদ্য সফলতা পেলেন সেই সময়কাল। আর

3) তৃতীয় ধাপ হলো সেই সময় যখন ইচ্ছা বা লক্ষ্যপূরণের ইচ্ছার ধাপ থেকে এগিয়ে কখনো যখন আপনি যদি অসফলতার সামনাসামনি হন, তখন সেই অসফলতার সময়কাল।

ব্যাপার হলো এই তিনটে ধাপেই একটি জিনিস আপনাকে বিচলিত করতে পারে অথবা ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে সেটি হলো ego অর্থাৎ অহংকার। এই অহংকার হলো প্রগতির পথে বাধা সৃষ্টিকারী শত্রু। যে সব ব্যক্তি জীবনে সফল হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকে, কিন্তু কখনো অহংকারী হন না। আত্মবিশ্বাস এবং অহংকার এর মধ্যে পার্থক্য আছে।

সফল মহান বিক্রয় বিশেষজ্ঞ এবং উদ্দীপক বক্তা শিব খেরা বলেছেন "নরম এবং ভাবসম্পন্নতা  ব্যাতিত হয়ে ব্যক্তি যদি আত্মবিশ্বাসী মনে হয় তাহলে বুঝবেন তাঁর ভিতরে অহংকার জাগছে।" তবে কতকগুলি পদ্ধতির মাধ্যমে এই অহংকার কে দমন করা যায়। মনের মধ্যে যদি অহংকার বা দম্ভ না আসে তাহলে যে কোনো লক্ষ্যবস্তু প্রাপ্তি করা সোজা হয়ে যায়।

প্রথম ধাপে যখন আমরা কোনো লক্ষ্যবস্তু পেতে চাই যেমন সরকারি চাকুরী পাওয়ার চেষ্টা বলুন বা সংগীতে পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা, অথবা কোনো ব্যাবসার জন্যে ভালো বিসনেস প্ল্যান তৈরি করার চেষ্টা, যায় হোক না কেন আরম্ভ অবস্থাতে সবথেকে বেশি অসুবিধা হয়। কারণ এই সময় ব্যক্তি সবথেকে বেশি উত্তেজিত থাকে, উদ্বিগ্ন থাকে, আবার অসহায়ও বোধ করে। কখনো কখনো এইসময় নিজের দুর্বলতা কে লুকোনোর উদ্দেশ্যে বড় বড় কথা বলা হয়। বড় বড় কথা বলা সহজ, এবং বড় বড় কথা বলে সহজে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ ও করা যায় এবং লোকের প্রশংসা ও কুড়োনো যায় কিন্তু বাস্তবে শুধু কথা বলে তো লাভ নেই। এতে সাময়িক মানসিক তুষ্টি তো মেলে কিন্তু কার্যসিদ্ধি হয় না।

শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করা নয়, চুপ চাপ থেকে কাজ করে যাওয়া এবং কাজের ফল প্রাপ্তি করে কার্য সমাধান করাই হলো উদ্দেশ্য। কখনো কখনো ব্যক্তির অহংকার তার মনের মধ্যে কাল্পনিক দর্শক তৈরি করে, যাতে তাঁর মনে হয় অন্য লোক সবাই তাঁকে নিয়েই দেখছে এবং তাকে নিয়েই ভাবছে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয় না। “Ego Is The Enemy” বই এর লেখক রায়ান হলিডে একটি উদাহরণ দিয়ে কথাটি বুঝিয়েছেন।..তিনি বলেন একটি ছাত্র এক সপ্তাহ ক্লাস এ যায় নি কারণ তার আগের দিন কেও তার পেন্ট এর উপরে ফলের রস ফেলে দিয়েছিলো এবং তার পেন্ট নোংরা হয়েছিল। এর ফলে ছেলেটি বাড়ি ফিরে একটি কাল্পনিক ছবি তৈরি করে যে.. পরের দিন সে স্কুল এ গেলে পরে ছেলেরা তাকে নিয়ে পেইন্ট এ রস পড়ার ঘটনা নিয়ে হাসাহাসি করছে। তার এই কাল্পনিক চিত্র তাকে ১ সপ্তাহ স্কুল না যেতে বাধ্য করে।বাস্তবে কিন্তু কোনো ছাত্রই ওই  ঘটনা নিয়ে হাসাহাসি করে নি। এটাই হয় অনেকেই কোনো ঘটনা কে নিয়ে খুব বেশি খারাপ চিন্তা ভাবনা করেন, যার ফলে তাঁর বাস্তব জীবনে ক্ষতি হয়।

 বাহিরের কোনো বস্তুর বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে ভাবে নেবেন সেটা ঠিক, কিন্তু দেখতে হবে যাতে তার প্রভাব আপনার নিজস্ব অস্তিত্ব কে প্রভাবিত যেন না করে। আজ সোসাল মিডিয়া ,app ,খবর, লোকের আকর্ষণ ইত্যাদি এতটাই অসুবিধা করে রেখেছে যে কোনো কাজে মন লাগানো একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। ফোর্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড বলেছেন আপনার প্রতিষ্টা আপনি যা করেন তার আধারে তৈরি হয়, আপনি যা করবেন তার আধারে নয় অনেক ব্যক্তি প্রতিভাশালী হয়েও অনেক কিছু করতে পারেন না, কারণ তার অহংকার কোনো না কোনো ভাবে আটকানোর চেষ্টা করে। আপনার প্রতিভা আপনার উৎপাদিত বস্তুর মতো। যতক্ষন প্রতিভা প্রদর্শন করবেন না ততক্ষন তার ব্যাপারে লোক বুঝতে পারবে না। এখন আমাদের উচিত বাধা কে ধ্যান না দিয়ে নিজের উপর উন্নতিসাধন করা।                          

                                                                                 


বাস্কেট বল প্লেয়ার বিল ব্রান্ডেলি সবসময় মনে রাখেন যে আপনি যখন অভ্যাস করছেন না তখন কোথাও না কোথাও, এবং কেও না কেউ অভ্যাস করছেন, এবং যখন আপনি তাকে সম্মুখ এ পাবেন তখন তিনি আপনাকে হারিয়ে দেবেন। সেই জন্য নিজের অভ্যাস করাটা কোনোমতেই ঢিলেমি দেওয়া চলবে না।

সেই জন্যে আপনি যতই প্রতিভাশালী হন না কেন, Aspire স্টেজ এর অহংকার কে কন্ট্রোল করতে পারলে তখন অবশ্যই সফলতা আসবে।কিন্তু যখন সফলতা আসবে তখন অহংকার আবার বড়ো আকারে আপনাকে বাধা দিতে আসবে। অহংকার আপনাকে বিভিন্ন আকারে নিচে ফেলার চেষ্টা করবে। সাক্ষাৎকার ,পুরস্কার ,রিপোর্টার ,পার্টি ,ইত্যাদি আপনাকে বিপথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। এসব জিনিস অহংকার এর খুব প্রিয়, কারণ এসব থেকে বাহবা পাওয়া যায়। সবসময় মনে রাখতে হবে.. যে কাজের জন্যে আপনি নিজে সম্মান পাচ্ছেন বা আপনি এখানে এসে পৌছেছেন,  সেই কাজ ও দায়িত্ব ভুলে গেলে চলবে না। প্রকৃত মূল্য কে বিসর্জন দিয়ে দূরে সরে গেলে যে অবস্থা হয় তা কিংফিশার এর কর্ণধার বিজয় মাল্য এর জীবন কাহিনী থেকে বোঝা যায়। যেমন করে সফলতা পাওয়া কঠিন, তেমনি সফলতাকে ধরে রাখাটাও কঠিন। তাই নিজের পরিচয় ঠিক জায়গায় রাখা দরকার বাড়িয়ে ছাড়িয়ে নয়,  এবং ছাত্রের মতো সারা জীবন পরিস্থিতি এবং পারিপার্শিক থেকে শিখতে থাকা দরকার ।

লেখক বলেন অবশ্যই আপনি বড়ো বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করুন, কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্য আপনাকে ছোট ছোট পদক্ষেপই আপনাকে নিখুঁত ভাবে নিতে হবে। যা ধীরে ধীরে এতো বড়ো হবে যে তা আপনার স্বপ্ন কে পূরণ করবে।এর অর্থ হলো নিজেকে বাড়িয়ে ছাড়িয়ে উপস্থাপন না করে ভালো। যদি  আপনি কোনো কোম্পানিতে রেসিপশনিস্ট এ থাকেন,  তাহলে রেসিপশনিস্ট এর ই পরিচয় দিন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সাপোর্টিং অফিসার বলার দরকার নেই। যাতে আপনি ভদ্র এবং মাটিগত থাকবেন এবং অন্যদের কাছে শেখার সুযোগ পাবেন এবং নিজের কাজকে উন্নত করার সুযোগ পাবেন।নিজের কাজ করে যান। যে কাজের জন্য লোকে আপনাকে জানে সেই কাজ ক্রমাগত করে যান।

অনেক সফল ব্যক্তি সাধারণ থাকেন এবং সাধারণ জীবন যাপন করেন।তবে এর অর্থ এই নয় যে তাঁরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে পারবেন না, এর অর্থ এই হলো যে তাঁরা নিজের আদর্শ এবং জীবনধারা কে বেশি মূল্য দেন।

বিখ্যাত বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মহম্মদ আলী বলেছেন আপনি যতই সফল হবেন ততই আপনার আদর্শ এবং জীবনমূল্য কে ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। আর এই পৃথিবী তে আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং প্রতিভা এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটা হলো আত্ম জাগরণ এবং বিনম্রতা।

তৃতীয় পয়েন্ট হলো নিজের অহংকারকে দমন রাখা সত্বেও অসফলতা আসতে পারে ।

ডেলট্রয়েড রেড নামক এক ছেলের ঘটনা। তাকে ১০ বছরের জন্যে জেলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ সে চুরি ছিনতাই, হাতিয়ার চালান ইত্যাদি মামলাতে সে জড়িত ছিল। যেহেতু জেল এ কিছু করার মতো ছিল না, তাই সে জেলে লাইব্রেরি থেকে ধৰ্ম, ইতিহাস, সামাজিক কিছু বই ইত্যাদি সারা বছর ধরে শিখে, এবং যখন জেল থেকে বের হয়ে আসে, পরে তার জীবন এ বিশাল পরিবর্তন হয়। পরে তিনি ম্যালকম এক্স নামক বিখ্যাত সোশ্যাল একটিভিস্ট হিসাবে পরিচিত হন। এমনকি আমেরিকার মন্ত্রী ও হন।

“48  LAWS  OF  POWER”  এর লেখক রবার্ট গ্রীন এই ঘটনা কে জীবিত সময় এবং মৃত সময় বলে আখ্যা দিয়েছেন।

নিজের আমাদের জীবনে দুধরনের সময় আছে ১)জীবিত সময় এবং ২)মৃত সময়। জীবিত সময় হলো যখন আপনি শিখেন বা সময় কে যখন কোনো ভাল কাজের জন্য ব্যবহার করেন তখন তা হলো জীবিত সময়। আবার যখন আপনি আপনার সময় কে অন্য কাওকে দায়ী করতে বা কিছু না করে ভাগ্যের উপর ভরসা করে বসে থাকার মতো হয়ে সময় নষ্ট কে বলা হয় মৃত সময়। ম্যালকম-এক্স জেলে বসে থাকার প্রত্যেকটি সময় কে বই পড়ে ওই সময় কে জীবিত সময় এ রূপান্তরিত করেন ।

রিপোর্টার তাঁকে কলেজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি জেল কেই নিজের কলেজ বলতেন। এভাবে আমাদের জীবনে দু ধরণের সময় থাকে ওয়েটিং লাইন এ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা হলো মৃত সময় । কিন্তু এই মৃত সময় এ অডিও বুক শোনা বা কিছু নোট পড়া হলো জীবিত সময়। যদি আপনি বার বার অসফল হচ্ছেন তাহলে আপনার ডেড টাইম কে এলাইভ টাইম এ রূপান্তরিত করুন দেখবেন সফলতা আসবে। 

অনেক খেলোয়াড় এমন হন যে নিজের সেরা খেলাটা দেওয়ার পরেও সফল হয়েও হাততালির অপেক্ষায় থাকেন না ।

রায়ান হলিডে বলছেন যেমন একবার মেঝে পরিষ্কার করলে মেঝে পরিষ্কার থাকে না, আবার ধুলো আসবে, আবার নোংরা হবে। মেঝে পরিষ্কার রাখতে গেলে বার বার ঝাড়ু মারতে হয়। তেমনি জীবনে প্রতিভা কে উজ্জ্বল রাখতে হলে বারবার অভ্যাস করতে হবে। অভ্যাস করে করে প্রতিভাকে উজ্জ্বল রাখতে হবে।

"Ryan Holidayএর লেখা Ego Is The Enemyখুব ভালো বই। বইটি তে আরো অনেক কিছু শেখার আছে। সময় নিয়ে বইটি অবশ্যই পড়ুন। ধন্যবাদ।। 

Post a Comment

0 Comments