যে কোনো খারাপ অভ্যাস কি করে বদলে ফেলবেন(How to change your Bad Habit ) :-

 

যে কোনো অভ্যাস বদলে ফেলার পদ্ধতি টি জানুন :-

কোনো অভ্যাস নতুন ভাবে গঠন করতে হলে প্রথম প্রথম খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। দেখবেন যখন আমরা বাইক চালাতে শিখি তখন অনেক কিছুতে ধ্যান দিতে হয়। ক্লাচ কখন দাবাতে হবে,  ব্র্যাক কখন দাবাতে হবে,’ গিয়ার্ কখন বদল করতে হবে,  এবং রাস্তার প্রতি নজর এসব ধ্যান দিতে দিতে চালাতে হয়। কিন্তু রোজ রোজ বাইক চালিয়ে যখন সেটা অভ্যাস হয়ে গেলো তখন সেটা স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে যায়। রোজ রোজ বাইক চালিয়ে কলেজ যাওয়া অভ্যাস হয়ে যাওয়ার পর এমনও ঘটনা হয়েছে যে আপনি অন্য মনস্ক হয়ে কলেজ এ বেরিয়েছেন, বাইক চালিয়ে বাড়ি থেকে কলেজ এ পৌছে গেছেন। অথচ কখন ব্রেক দিলেন, কখন হর্ন দিলেন, কখন গিয়ার্ বদল করলেন কিছু আপনাকে ভাবতে হয় নি। সব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে  হয়ে গেছে  অথচ আপনি কলেজ এ পৌছে গেলেন। এটার কারণ বাইক চালানো এবং ঘর থেকে বাইক এ কলেজ এ যাওয়া ব্যাপারটা আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে।

যখন আমরা কোনো কাজ করি তখন আমাদের মনকে সচেতন হয়ে কাজটি করতে হয়, কিন্তু যখন সেটা করতে করতে অভ্যাস হয়ে যায়, তখন মন সেটার একটা প্যাটার্ন বানিয়ে আমাদের মস্তিষ্কে সঞ্চয় করে রাখে। তারপর কাজটি করতে আমাদের বেশি অথবা একদমই ভাবার দরকার পড়ে না। কারণ এবার সে কাজটি আমাদের অবচেতন মন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করে। উদাহরণ স্বরূপ চলতে চলতে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা ভাবতে ভাবতে বিনা রাস্তার দিকে ধ্যান দিয়ে ঘর পর্যন্ত চলে আসা, অথবা সকালে বাথরুম যাওয়া, বা ব্রাশ করা ইত্যাদি কাজ। আমাদের মস্তিস্ক সেই স্বভাব কে সঞ্চয় করে রাখে, যাতে সেই কাজটি যখন করা হয়, তখন তার উপর বেশি ধ্যান না দিয়ে মস্তিস্ক অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে।

এসব হলো অভ্যাস এর ভালো দিক। কিন্তু খারাপ দিকটা হলো যে.. আমাদের মস্তিস্ক ভালো অভ্যাস এবং খারাপ অভ্যাস এর মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করতে পারে না। মস্তিস্ক শুধু অভ্যাস বানিয়ে সেটা মস্তিষ্কে সঞ্চয় করতে পারে। এটা আমাদের অনেক সমস্যায় ফেলে। কারণ সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রে খারাপ কাজ বা অপ্রয়োজনীয় কাজ করেন। এবং পরে সেই কাজ মস্তিস্ক দ্বারা স্বভাব এ পরিণত হয়ে যায়।

খারাপ কাজ স্বভাব এ পরিণত হলে স্বভাব আপনাকে তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে খারাপ কাজ করতে  চালিত করবে। আপনার সফলতা অথবা অসফলতা তৈরিতে আপনার স্বভাব এর বড়ো ভূমিকা থাকে। তাই ভালো স্বভাবকে গ্রহণ করা এবং খারাপ স্বভাব কে ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি। যদি খারাপ অভ্যাস দূর করার প্রয়োজন হয়, এবং ভালো অভ্যাস তৈরি করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে সেটা পরিবর্তন করতে হলে আগে স্বভাব তৈরি কি করে হয় সেটা জানতে হবে।

বাস্তবে স্বভাব তিনটি ধাপে তৈরি হয়:-

১) প্রথম হলো CUE বা TRIGGER (উৎসাহ দাতা )  

২) ROUTINE (নিত্যকর্ম ) 

৩)REWARD (পুরস্কার )

A)Trigger :-ট্রিগার হলো সেটা যা আপনাকে ভালো বা খারাপ কাজ কাজ করতে উৎসাহিত করে। যা থেকে আপনাকে মনে হয় আপনি এই কাজটা করবেন। উদাহরণ স্বরূপ কেউ সিগারেট খেতে শুরু করে যখন তার কোনো বন্ধু তাকে সিগারেটে খেতে উৎসাহিত করে। এখন যেহেতু বন্ধুর প্রভাব আমাদের জীবনে খুব বেশি থাকে তাই প্রথমে মানা করলেও "এটা একটা 'টাইম পাস' এর মাধ্যম  ভেবে ",অথবা "এখন খাই পরে আর খাবো না' ভেবে সিগারেট খাওয়া শুরু করেন। শুরুতে বন্ধু তাকে সিগারেট খাওয়াবার জন্য ডেকে নিয়ে যায়, কিন্তু কিছুদিন পর যখন সেটা তার অভ্যাস হয়ে যায় তখন দেখা যায় সে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওই বন্ধু কে নিয়ে সিগারেট খেতে যাচ্ছে। এখানে তার বন্ধু হলো ওই ধূমপানের জন্য উৎসাহদানে কারী। তার কাছে ট্রিগার হলো যখনি সে তার বন্ধু কে দেখতে পায় তখন তার সিগারেট খাবার ইচ্ছা জাগে।

এই ট্রিগার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যাকে আমরা ৫ টি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি:-

১) একটি নির্দিষ্ট জায়গা পৌছালে যা আপনাকে ভালো বা খারাপ কাজ করতে "ট্রিগার" এর কাজ করবে।

২) কোনো নির্দিষ্ট সময় এলে ভালো বা খারাপ কাজ কারবার ইচ্ছা জাগে।

৩) মানসিক স্থিতির উপর নির্ভর করে উৎসাহ আসা। যেমন :দুঃখ অনুভব বা সুখ অনুভব হলে সিগারেট খাওয়া বা মদ খাওয়া। আনন্দে বিনোদন ইত্যাদি।

৪) অন্যের কারণে, যেমন বন্ধুর সাথে দেখা হলে সিগারেট খাওয়া।

৫)কোনো একটি ঘটনার সাথে অন্য অভ্যাস সম্পর্কিত হওয়া। যেমন:- দুপুরের খাবার খেয়ে উঠে সিগারেট খাওয়া।

                                                                                 


B) ট্রিগার পাওয়ার পর লোক যে দ্বিতীয় ধাপে যায় সেটা হলো ‘Routine’:-

Routineখুব ছোট বা বড়ো মানের হতে পারে। যেমন বন্ধু কে পাওয়ার পর কোনো খানে যাওয়া এবং সেখানে গিয়ে সিগারেট খাওয়া, এবং নির্দিস্ট জায়গায় গিয়ে সিগারেট জ্বালানো, আবার হতে পারে কলেজ থেকে বেরিয়ে এসে ক্যান্টিন এ সিগারেটে খাওয়া বা ফাস্টফুড খাওয়া, এসব 'Action Routine' এর মধ্যে আসে।

C)আবার তৃতীয় ধাপ হলো "Reward ":- রিওয়ার্ড হলো শেষ ধাপ যা থেকে "অভ্যাস" তৈরি হয়। যেমন হলো যখন কেউ সিগারেট এর প্রথম টান নেয়,তখন তার শরীর এ নিকোটিন প্রবেশ করে, যা আরাম এবং উত্তেজনা অনুভব করায়। এটা হলো ‘Reward’

এইভাবে ভালো বা খারাপ সভাব এই তিন পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি হয়। এবং এই অভ্যাস যতই বেশি চলতে থাকে ততই বেশি দৃঢ় হতে থাকে, তা সে সিগারেটে খাওয়া, চা খাওয়া, কম বা বেশি খাওয়া, অথবা ভালো বা মন্দ কাজ করা, যাই হোক না কেন।

 এখন কথা হচ্ছে খারাপ স্বভাব কে কি করে দূর করা যায়?  

বড়ো কথা হলো কোনো অভ্যাস কে হঠাৎ করে বন্ধ করা কঠিন হয়। কারন তার স্বভাব এর প্যাটার্ন আমাদের মস্তিষ্কে ঘন ভাবে গেঁথে থাকে। যা এতো মজবুত হয়ে থাকে যে তাকে পুরোপুরি ভাবে শেষ করা মুশকিল হয়ে যায়। সে জন্য দেখা যায় যে কোনো ব্যক্তি যখন কোনো অভ্যাস কে হঠাৎ করে বন্ধ করতে চান, তা কিছুদিন নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারেন, কিন্তু তার একটি কোন ট্রিগার পেতেই সেই পুরোনো অভ্যাস আবার  জেগে ওঠে। অভ্যাস ত্যাগ এর ভালো পদ্ধতি এই নয় যে আপনি পুরোনো অভ্যাস হঠাৎ বন্ধ করুন। সবথেকে ভালো পদ্ধতি হলো.. ওই পুরোনো অভ্যাস কে নতুন ভালো অভ্যাস দিয়ে বদলে দিন। ঐসময় ঐস্থানে যা অভ্যাস ছিল সেটা অন্য অভ্যাস দিয়ে বদল করুন।

এক ব্যক্তির রোজ খুব তেলেভাজা খাবার অভ্যাস ছিল। তার রোজ রোজ তেলেভাজা খাবার অভ্যাস এর জন্য শরীর এর ওজন  বেড়ে যাচ্ছিলো। তিনি খুব মোটা হয়ে যাচ্ছিলেন। যখন তিন ভাবলেন, যে করেই হোক তিনি এই অভ্যাসটা ত্যাগ করে ফেলবেন। ঠিক সেই সুযোগেই তার এক বন্ধু তাকে POWER OF HABIT বইটি পড়তে দেয়। সেই বই পড়ার পর তিনি অভ্যাস বদলের পদ্ধতি জেনে যান এবং তিনি সেই পদ্ধতি নিজের জীবনে প্রয়োগ করেন। প্রথমে তিনি খুঁজে বের করেন এই অভ্যাস চক্র এর তিনটি ধাপ গুলি কি কি? তিনি বুঝতে পারেন প্রতিদিন  বিকেল তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে তাঁর তেলেভাজা খাবার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাঁর  নিত্যাভ্যাস ছিল অফিস টাইম এর পর তিনি একঘেয়েঁ হয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সেই সময় লিফ্ট বেয়ে নিচে নেমে অফিস ক্যান্টিন এর পাশে তেলেভাজার দোকানে যেতেন, সেখানে তেলেভাজা কিনতেন এবং দোকান এ নিত্য আসা লোকেদের সঙ্গে আড্ডা করতে করতে তেলেভাজা খেতেন। এই হলো  তেলেভাজা খাবার মজা। এই পদ্ধতি বুঝতে পারার পর তিনি পদ্ধতির দ্বিতীয় এবং তৃতীয়া ধাপ কে বদলে দেন। দ্বিতীয় দিন যখন তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের সময় তাঁর তেলেভাজা খাবার ইচ্ছা জাগে, তিনি সিঁড়ি বেয়ে নিচে ক্যান্টিন এর সামনে দোকানে আসেন, কিন্তু তিনি তেলেভাজা না কিনে এক টাকার একটি চকলেট কেনেন, তার পর চকলেট চুষতে চুষতে ক্যান্টিন এ বন্ধুদের সাথে এসে কথা বলেন এবং সেখান থেকে চলে যান। দ্বিতীয় দিনেও তিনি ঠিক তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে  লিফ্ট বেয়ে নিচে ক্যান্টিন এ এলেন এবং বন্ধুদের সাথে কথা বললেন কিন্তু কিছু খেলেন না এবং চলে গেলেন। এই নতুন পদ্ধতি টি তিনি অনেক দিন অনুসরণ করলেন।

 এতে তিনি "TRIGGER" থেকে লড়াই করার চেষ্টা করেন নি। তিনি ওই অভ্যাস কে অন্য অভ্যাস দিয়ে বদলে দিলেন। যার ফলে ওই পুরোনো অভ্যাস বদলে গেলো।

এইভাবে কোনো অভ্যাস কে অন্য অভ্যাস দিয়ে বদলে ফেলা সম্ভব।

 অভ্যাস পরিবর্তন করতে হলে, প্রথমে অভ্যাস চক্র এর  এর তিনটি ধাপ ‘Trigger’,  ‘Routine’ এবং ‘Reward’ কে খুঁজে বের করুন। তার পর ওই চক্র এর ‘Routine’ এবং ‘Reward’ কে অন্য ‘Routine’ এবং ‘Reward’ দিয়ে বদল করে দিন। এটা করা একটু কঠিন, কিন্তু সম্ভব বটে। অভ্যাস বদল করার এটাই হলো সূত্র।

 

এই সারমর্ম Charles Duhigg এর লেখা বই Power of Habit থেকে গৃহীত।  



আরো পড়ুন:How to "IKIGAI" ,  Finish What you Start. , How to remain "Unscripted"?

                      Ratan Tata, Mukesh Ambani, Azim Premji, Gandhiji, Mandella, Kalam's Quotes

                      Motivational And Inspirational Quotes For Success

                      Dan Lok's Advice  For Success ,   14 Risks you must take for Success

                      চিন্তন করুন এবং সফল হন ,  কেন করবেন ? সেটা জেনে তবেই কাজটি করুন , 

                      জীবনে কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর প্রভাব , বাধার মধ্যে দিয়ে পেরিয়েই সফলতা আসে ,

                      অহংকার হলো চরম শত্রু , আত্মজ্ঞান কি , শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সার ,

                     আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ , 

                সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,

                ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , 

                মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস

                ব্যবসার জন্য মুদ্রা লোন PMMY  Loan ,  Inner Engineering by Sadguru Jaggi Vasudev



For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com


Post a Comment

0 Comments