"আভ্যন্তরীন কারিগরিবিদ্যা"র মাধ্যমে আপনার আভ্যন্তরীন ক্ষমতা কে জাগরিত করুন (The Inner Engineering by sadguru Jaggi Vasudev):-

 Inner Engineering এর মাধ্যমে আপনার আভ্যন্তরীন ক্ষমতা কে জাগরিত করুন:-

"Inner Engineering" অর্থাৎ  "আভ্যন্তরীন কারিগরিবিদ্যা" হলো সেই শিক্ষা যার মাধ্যমে নিজের মন,  মানসিক আবেগ, আত্মশক্তি এবং নিজের শরীর কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করা যায় সেই বিদ্যা। পৃথিবী তে মানুষ যা কিছু পরিবর্তন এনেছেন বা নতুন কিছু নির্মাণ বা ধংস করেছেন তা বাস্তবে মানসিক শক্তি বা চিন্তন এরই বাহ্যিক রূপ। তাই এই পৃথিবীতে জীবন কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে গেলে "Inner Engineering" কে জানা আবশ্যক। সদগুরু জজ্ঞী বাসুদেব একজন ভারতীয় যোগী এবং লেখক এই আভ্যন্তরীন কারিগরিবিদ্যা  বিষয়ে তাঁর " Inner Engineering" নামক বইটিতে  খুব সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করেছেন।

একটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠিত মন যতকিছু পায়, সবকিছু যুক্তি দিয়ে পরখ করে তবে গ্রহণ করে। যদি আপনি আপনার নিজের মন কে সঠিক ভাবে পরিচালনা করেন তাহলে দেখবেন মন প্রকৃতির সবকিছুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার শরীর, আপনার মন, আপনার আবেগ,  আপনার জীবনীশক্তি সবকিছুকেই সঠিকভাবে নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত করা যেতে পারে। যখন এই চারটি  সিস্টেম কেই একমুখী করা যায়, একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট দিকে পরিচালিত করা যায়, এবং সেটা যদি করতে পারলেন তাহলে এই সৃষ্টিতে যা করতে চাইবেন সবই করা সম্ভব। এবং সেটা এমন ভাবে ঘটবে যে আপনাকে কিছুই করতে হবে না, আপনা আপনি ফলপ্রসূ হতে থাকবে। কোনো কিছুর ক্রিয়া না করেই যা কিছুই চাইবেন সেটাই  হতে থাকবে। যদি এই চারটি সিস্টেম কে নির্দিষ্ট দিকে নির্দিষ্ট  উদ্দেশ্যে স্থির রাখতে পারলেন এবং যতদিন না কাজটি সম্পূর্ণ হচ্ছে নির্দিষ্ট দিকে অনড় রাখতে পারলেন, তাহলে কিছু সময়কালের মধ্যে সেটার ফল দেখতে পাবেন। 

কিন্তু সমস্যা হলো মন সবসময় তার দিক পরিবর্তন করতে থাকে। যদি আপনি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পৌছাতে চান, কিন্তু গমন কালে প্রত্যেক মুহূর্তে আপনার দিক পরিবর্তন হতে থাকে,  তাহলে আপনি যে দিকে যে উদ্দেশ্যে যেতে চাইছেন সেখানে পৌছানোর সম্ভাবনা কম। যদি কোনো সৌভাগ্য বশত পৌছে গেলেন তো গেলেন, নাহলে বেশির ভাগ সম্ভাবনাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মনকে পরিচালনা করা এবং এই চারটি সিস্টেম কে নির্দিষ্টমুখী করাটাই হলো আসল কাজ। যদি আপনি এটা করতে পারেন আপনি একটা 'কল্পবৃক্ষ' হয়ে যাবেন। তবে আরেকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, পৃথিবীর প্রত্যেকটি ব্যক্তি এতদিনে প্রকৃতি থেকে যা কিছু চেয়েছেন তা সবই যদি ফলপ্রসূ হতো তাহলে পৃথিবী তার অস্তিত্বই হারিয়ে যেত। তাই আপনি কি চাইবেন বা কি চাইবেন না সেটার জন্য দায়িত্ববান হতে হবে। আপনি যদি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ করতে শেখেন তাহলে আপনাকে দায়িত্ববান ও হতে হবে। আপনি প্রকৃতিকে যা কিছু ইচ্ছা চেয়ে বসবেন তা চলে না। ভেবে চিন্তে নিজের উদ্দেশ্য নির্ণয় করতে হবে যাতে সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এই বিশ্বে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে যা কিছু পরিবর্তন বা সৃষ্টি করা হয়েছে, যা যা চমৎকারই জিনিসপত্র মানুষ তৈরি করেছেন সে সবকিছুর একটাই উদ্দেশ্য ছিল মানব জীবন কে সহজ সরল তৈরি করা। কিন্তু কিছু ব্যক্তি সেই প্রযুক্তিকে ভুল উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছেন এবং করছেন তার কারণ সেটা সচেতন মন দিয়ে করা হয় নি বা হচ্ছে না। সেটা কম্পালসিভ অ্যাকশন(বাধ্যতামূলক আবেগ) এর মাধ্যমে করা হয়েছে বা হচ্ছে।

মনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার অর্থই হলো মনকে "আবেগ চালিত" অবস্থা থেকে "সচেতন" অবস্থায় নিয়ে আসা।

 

আপনি দেখেছেন যে কিছু ব্যক্তি এই প্রকৃতি তে যা কিছু চেয়েছেন তাই ফলপ্রসূ হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটার মূল কারণ হলো তাঁর মধ্যে থাকা আত্মবিশ্বাস।

কোনো জিনিস যখন করবেন, তাতে আপনার আত্মবিশ্বাস যদি থাকে যে এটা হবে বা এটা করতে পারবো, তাহলে দেখবেন সেটা করা ও সম্ভব হবে।

ধরুন আপনি একটি বাড়ি তৈরি করতে চান যা তৈরি করতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা খরচ হবে। আপনি মনে মনে ভাবছেন "আমি বাড়ি তৈরি করতে চাই, কিন্তু এটা তৈরি করতে খরচ হবে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা, আর আমার কাছে পঞ্চাশ টাকা আছে, তাই বাড়ি তৈরি সম্ভব নয়, সম্ভব নয়, সম্ভব নয়।" এই কথার অর্থ আপনি পরোক্ষ ভাবে এটাও বলছেন যে "আমি বাড়ি তৈরি করতে চাই না, চাই না, চাই না।"  মনের এক স্তর থেকে আপনি বলছেন আমি বাড়ি তৈরি করতে চাই, আবার আরেক স্তর থেকে বলছেন 'আমার দ্বারা সম্ভব নয়।" এই দোটানা দ্বিধার কারণে কাজটি বাস্তবায়িত নাও হতে পারে।

 

দেখবেন যাঁর কোনো মন্দির বা কোনো দেবতার কাছে সহজ সরল মনে বিশ্বাস আছে,  এক বালকের মতো সহজ সরল মন আছে, এবং তাঁর ইষ্টদেবের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আছে,  তিনি মন্দিরে যান এবং ইষ্টদেবকে প্রার্থনা করে বলেন "হে ঈশ্বর! যে করেই হোক আপনাকে আমার জন্য এটা করতেই হবে।" এখানে সেই ব্যক্তির  মনে কোনো ঋনাত্বক ভাবনা নেই,  কোনো দ্বিধা নেই, ইষ্টদেবের প্রতি তাঁর প্রতি পুরোপুরি বিশ্বাস আছে যে ইষ্টদেব তাঁর কথা শুনবেন এবং তাঁর কাজটি ফলপ্রসূ হবে। এই অগাধ বিশ্বাস এর ফলে দেখা গেছে সেই কাজটি সত্যিই বাস্তবায়িত হয়।

একনিষ্ঠ বিশ্বাস, একনিষ্ঠ আত্মবিশ্বাস সবকিছু কে সম্ভব করে দেয়। তাহলে ঈশ্বর এসে কি সেই বাড়ি নির্মাণ করবেন? না। আমরা যাঁকে ঈশ্বর বলে পূজা করি সেটা হলো" Source  of  Creation  " অর্থাৎ "উৎসস্থল'

নির্মাতা এক দারুন আশ্চর্যকর সৃষ্টি নির্মাণ করে গেছেন,  এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই মহাবিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তার থেকে ভালো কিছু নির্মাণ করা যায় তা আমরা ভাবতেও পারি না। এর থেকে ভালো নির্মাণ সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আপনি চান আপনার নিজস্ব জীবন কে নিজের মতো করে পরিচালনা করবেন তাহলে ওই চারটি সিস্টেম শরীর,  মন, আবেগ, এবং মানসিক শক্তি কে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করা শিখতে হবে।

 

আপনার জীবনের অশান্তির মূল কারণ হলো আপনি যেটা চান সেটা হচ্ছে না বা সেরকমভাবে হচ্ছে না। এবং আপনি যা চাইছেন তাই যদি ঘটে তাহলে আপনি খুশি হবেন। যদি আপনি চান যে আপনার জীবনে আপনার ইচ্ছে মতো ঘটুক, তাহলে দেখতে হবে আপনি কি চাইছেন?  আপনি কতটা মন দিয়ে, কতটা গুরুত্ব দিয়ে সেটা চাইছেন? আপনার চাহিদা বস্তুর জন্য আপনার মন কতটা স্থির থাকতে পারছে?  এবং আপনার চিন্তাশক্তিকে,  কতটা মানসিক শক্তিকে, নিবেশ করতে পারছেন। এসবের উপরেই নির্ভর করছে আপনার চিন্তাধারা বাস্তবায়িত হবে কি না? যদি আপনার চিন্তাশক্তি তে ঋনাত্বক চিন্তাধারা প্রবেশ করে তাহলে সেটা বাস্তবায়িত হবে না।

কি সম্ভব এবং কি সম্ভব নয় সেটা ভাবনা করা আপনার কাজ নয় সেটা প্রকৃতির কাজ। আপনার কাজ শুধু হলো আপনি যা চান তার জন্য শারীরিক শক্তি, মানসিক শক্তি, আবেগ শক্তি এবং জীবনীশক্তি কে একসাথে একপথে চালিত করা। আপনি এখানে বসে আছেন। আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় "আপনি উড়তে পারবেন ?"  আপনি বলবেন, না পারবো না। এবার আপনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি দৌড়তে পারবেন ? আপনি বলবেন "হ্যাঁ"। কেন এমন হয়?

আপনি যা উত্তর দিলেন তা আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দিয়েছেন। এর কারণ এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি যা যা অভিজ্ঞাতার মাধ্যমে আয়ত্ত করেছেন সেই অভিজ্ঞতা থেকে উত্তর টা দিলেন। এই অভিজ্ঞাতার বাইরে কি সম্ভব আর কি সম্ভব নয় তা ভেবে দেখেন নি। আপনি বিশ্বাস করেছেন যেটা এতদিন  সম্ভব হয় নি সেটা ভবিস্বতেও সম্ভব নয়। এটা মানুষত্ব কে অপমান করা উত্তর।

যা আগে হয় নি তা ভবিষ্যতে হওয়া সম্ভব বটে। যা হয়নি তা মানুষ ভবিষ্যতে করার ক্ষমতা রাখেন। তাই কি সম্ভব আর কি সম্ভব নয় সেটা ভাবা আপনার কাজ নয়,  সেটা প্রকৃতির কাজ,  প্রকৃতি সেটা নির্ণয় করবে। আপনার কাজ শুধু হলো আপনি যেটা করতে চান সেটার জন্য কাজ করুন, চেষ্টা করুন এবং আপনার চিন্তাশক্তি যদি প্রচণ্ড বিশ্বাসের সাথে,  প্রচণ্ড মানসিক শক্তির সাথে অবিচলিত হয়ে সেটা সম্বন্ধে চিন্তা করতে পারছেন যে এটা করা সম্ভব হবে,  তাহলে সেটা বাস্তবায়িত হবেই।

বিজ্ঞান ও বলেছে যে এই বিশ্বে যা ঘটে সব শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়,  শক্তির দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রাকৃতিক শক্তির কম্পাঙ্ক আছে,  তেমনি আপনার চিন্তা শক্তিরও  একটা কম্পাঙ্ক আছে যা প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে তার ইচ্ছাশক্তিকে ফলপ্রসূ করতে পারে। একটি প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী চিন্তাশক্তি যদি তৈরি করতে পারেন যা প্রকৃতির শক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষমতা রাখে তাহলে সেই চিন্তাশক্তি প্রকৃতির শক্তিকে অধীন করে তার কাছ থেকে সেই নিজের ইচ্ছা কে বাস্তবায়িত করবে।                                                                                                                                              


সমস্যা হলো বেশিরভাগ ব্যক্তিই যা কিছু করতে চান,  সেটার উপর পূর্ণ আস্থা বা পূর্ণ আত্মবিশ্বাস থাকে না। মনের মধ্যে দ্বিধা আসে "চাইছি ত কি জানি পারবো কি না ?" এরকম দ্বিধা চিন্তাশক্তির মাঝখানে এসে মনের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। এবং কাজটি বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

সেই চিন্তাশক্তির প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে।

 

 আরেকটা বিকল্প ব্যবস্থা আছে সেটা হলো ত্যাগ এবং সমর্পন। নিজের চিন্তা শক্তি কে এমন ভাবে গঠন করুন এবং মনকে এমন ভাবে সমর্পন করুন যাতে কোনো মতেই এই চিন্তা না আসে যে কাজটি সম্ভব কি অসম্ভব?  মনের চিন্তাশক্তিতে যেন   কোনোমতেই মনে না হয় যে কাজটি করতে গিয়ে কোনো বাধা বা বিপত্তি আছে। আপনি যা চান তার প্রতি যেন আপনার চিন্তাশক্তি মুক্তভাবে চিন্তন করতে পারে এবং সেই কাজটির পদ্ধতিকে অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে পারে। একবার যদি এটা হয়ে যায় তাহলে সেই চিন্তাধারা কে বাস্তবায়িত করা সহজ হয়ে যায়।

আপনি যা বাস্তবায়িত করতে চান সেটা ফলপ্রসূ করার জন্য যেটা প্রথমে করতে হবে তা হলো সেই কাজ যেন মনের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়। আপনার কাজটি যদি একবার মনের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে যায়, তাহলে সেটা প্রকৃতিতেও বাস্তবায়িত করা সম্ভব।

যা আপনি চান ঘটুক,  সেটা আগে মনের মধ্যে যাচাই করে চেয়ে দেখতে হবে সত্যি সেটা আপন চান কিনা?

তাই চিন্তন করে দেখতে হবে কি সেই বিশেষ কাজ যেটি আপনি করতে চান? একবার যদি সেটা নির্ণয় হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয় কাজ হলো নির্দ্বিধায় সেটা বাস্তবায়িত করতে নেমে পড়ুন। আর একবার যখন নেমে পড়লেন তখন যতক্ষণ পর্যন্ত না কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, অবিচলিত থেকে নিজের চিন্তাশক্তিকে নির্দিষ্ট দিকে স্থির রাখুন। দেখবেন আপনি যা করতে চান বা যেটা আপনি চান ঘটুক সেটা বাস্তবায়িত হবে। 

প্রকৃতভাবে জীবনে আপনি কি চান? সব মানুষ যা চান তা হলো,  তিনি আনন্দে থাকতে চান,  তিনি শান্তিতে থাকতে চান, আত্মীয় বন্ধুবান্ধবদের কাছে তিনি সবার প্রিয় হতে চান। এককথায় সকল মানব জগৎ এটাই চাইছেন যে নিজের মনের মধ্যে এবং চারদিকে খুশিতে ভারে উঠুক। এই খুশি যদি শুধু দেহের মধ্যে ঘটে আমরা তাকে বলি "আনন্দ", এই আনন্দ যখন আমাদের মনের মধ্যে ঘটে তখন তাকে বলি  "খুশি",  যখন এই আনন্দ আমাদের আবেগের মধ্যে ঘটে তখন তাকে আমরা বলি "প্রেম এবং সহানুভূতি" আর যখন এই আনন্দ আমাদের অন্তরাত্মার মধ্যে ঘটে তখন তাকে বলি "পরমানন্দ এবং পরম শান্তি"। এটাই মানুষ চায়।

যদি তিনি অফিস এ টাকারোজগার করার উদ্দেশ্যে যান, চাকরি করেন, অথবা ব্যবসা করেন, অথবা একটি ভালো পরিবার চান,  অথবা মন্দিরে বসে প্রার্থনা করেন, অথবা এমনকি মদ্যপান ও করতে যান, সবকিছুতেই যেটা মূল চাহিদা হলো তা হলো আনন্দ এবং শান্তি পাওয়া। আর যদি শান্তি এবং আনন্দ লাভই হলো আমাদের উদ্দেশ্য তাহলে আমাদের উচিত এসব না করে যে চারটি সিস্টেম এর কথা বলা হলো শরীর,  মন, আবেগ, এবং জীবনীশক্তি এদের নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাই শ্রেয়।

যদি আপনি পরমানন্দ এবং পরমশান্তি পেতে চান এবং সারা পৃথিবীও আনন্দময় এবং শান্তিময় হয়ে উঠুক,  আপনি যদি এই প্রকৃতির শক্তিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত করে নিজের চিন্তাধারা কে বাস্তবায়িত করতে চান, তাহলে উপরের চারটি সিস্টেম কে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতে শিখতে হবে।

  প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি এভাবে আরম্ভ করেন এই ভেবে যে, আজ আমি যেখানেই যায় না কেন আমি  শান্তিপূর্ণ, আনন্দদায়ক প্রেমময় পরিবেশ তৈরি করব। এই যাত্রা কালে যদি আপনি হেঁচট খেয়ে পড়েও যান কিছু আসে যায় না। একজন সমর্পিত যাত্রী র জীবনে অসফলতা বলে কোনো শব্দের অস্তিত্ব থাকে না। যদি আপনি শতবার পড়েও যান শতবার ই আপনি নতুন জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। যদি আপনি যে উদ্দেশ্য সফল করতে চান তার উপর সমর্পিত থাকেন,  আপনার মন আপনা আপনি সেই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হবে। একবার আপনার মন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলে, মন যেহেতু যা ভাবে তাই অনুভব  করে, সেইজন্য উদ্দেশ্য পরিকল্পিত হওয়ার সাথে সাথেই মনের আবেগ ও সেই পথে পরিচালিত হবে। একবার যদি আপনার মন এবং আবেগ নির্দিষ্টমুখে পরিচালিত হয়, আপনার আত্মশক্তিও সেই পথেই পরিচালিত হবে। একবার যদি আপনার মন, আবেগ, এবং আত্মশক্তি নির্দিষ্টমুখে পরিচালিত হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরও সেই উদ্দেশ্যেই চালিত হবে। একবার এই চারটি সিস্টেম মন, আবেগ, মানসিক শক্তি এবং শরীর একটি নির্দিষ্ট মুখে চালিত হলে আপনি যা করতে চাইবেন তাই সম্ভব হবে।

যদি আপনি একটি কলা খান,  চার ঘন্টার মধ্যে সেটা আপনার অঙ্গের অংশে পরিণত হয়ে যায়। আপনার মধ্যে এমন কিছু আছে যাতে একটি জীবন তৈরির  পদ্ধতি চলছে, যার মাধ্যমে ওই শরীর নির্মাণ হচ্ছে। একটি কলাকে মানব শরীর এর অঙ্গীভূত করা পদ্ধতিটি সাধারণ পদ্ধতি নয়। এই ঘটনা যেটা ঘটছে একটি কলাকে মানব শরীর এ পরিণত করা, এই পদ্ধতিটি অচেতন ভাবে ঘটছে যেটা আমরা জানি না।  কিন্তু এই ঘটনাই যদি আপনি সচেতন ভাবে করতে পারেন তাহলে আপনিই নির্মাতা হয়ে যাবেন। একটি বানর থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এ পরিণত হতে লক্ষ লক্ষ বছর লেগেছে, আর একটি কলা 4 ঘন্টার মধ্যেই শরীর এর অঙ্গে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

আপনি ওই চারটি সিস্টেম কে যদি নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট মুখে চালিত করতে পারেন, তাহলে সারা পৃথিবী, সারা সৃষ্টি আপনার সহযোগী হয়ে যাবে। এই প্রকৃতির সৃষ্টি আপনার পক্ষে কাজ করবে। আপনি একটি কল্পবৃক্ষে পরিণত হয়ে যাবেন।

সৃষ্টি নির্মাণের পদ্ধতি আপনার মধ্যেও ঘটছে। আপনি যদি মন, আবেগ, মানসিক শক্তি,  এবং শরীর এই চারটি সিস্টেম কে সঠিকভাবে প্ৰচলিত করতে পারেন, তাহলে আপনার জীবন সফল। আপনার মধ্যে যা চান তাই করবার ক্ষমতা জন্মাবে।    

 

কতকগুলি পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে এই পরিচালনা পদ্ধতি শেখা যায়। এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির একটি ক্ষুদ্র নির্মাণ থেকে নিজেকে "নির্মাতাতৈরি করা। এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য ঈশ্বরের সন্ধান করা নয়,  এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো নিজেকে ঈশ্বর এ পরিণত করা। এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য দেবতা এর সন্ধান করা নয়। এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো নিজেকে দেবতায় পরিণত করা। শুধু রক্তমাংসের শরীর থেকে নিজেকে 'নির্মাতা' তৈরি করাই হলো এর উদ্দেশ্য। যোগ এর মূল উদ্দেশ্যই হলো সৃষ্টির  ক্ষুদ্র নির্মাণ থেকে নিজেকে "নির্মাতা"য় পরিণত করা   

সারবস্তু সদগুরু এবং যোগী  "জজ্ঞী বাসুদেব" জীর লেখা  INNER ENGINEERING নামক বই থেকে গৃহীত।


আরো পড়ুন:- জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য , সেই একটি উদ্দেশ্য যা আপনার জীবন সফল করে দেবে , 

                    ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , আকর্ষণের সূত্র , 

                   সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সফলতার ১৫ টি সূত্র , 

For Motivational Articles In English visit.....www.badisafalta.com


Post a Comment

0 Comments