সেই একটি উদ্দেশ্য যা আপনার জীবন সফল করে দেবে(The One Thing) :-

 

সেই একটি উদ্দেশ্যেই লেগে থাকুন যা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ :-

আমাদের জীবনে অনেক ধরনের ইচ্ছা এবং চাহিদা থাকে যেমন:- চাকরি , ঘর বাড়ি, সম্পত্তি, সংসার আত্মীয়, সমাজে প্রতিষ্ঠা, মান-সম্মান ,ভালো ছেলে-পুলে ইত্যাদি। রোজকার ছোট বড় চাওয়া পাওয়া থেকে শুরু করে জীবনের বড় প্রাপ্তি পর্যন্ত অনেক কিছুই থাকে। রোজকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক অথবা জীবনের উদ্দেশ্য চয়ন। মন চায় এটাও করি, ওটাও করি। বাস্তবে প্রত্যেকের জীবনে একটি বিশেষ চাহিদা থাকে যেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেশির ভাগ ব্যক্তিই সেটি খুঁজে বের করতে পারেন না,  সেই জন্য সবসময় দোলাচলে ভুগতে থাকেন।  আপনার জীবনে শুধু একটি জিনিসের বিশেষ চাহিদা আছে, যেটি সফল হলে আপনাকে সবথেকে বেশি সফল করবে এবং সন্তুষ্ট করবে। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য আছে যেটি সম্পন্ন হলে বাকি সব চাহিদা সহজলভ্য হয়ে যাবে অথবা বাকি সব চাহিদা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।

“The One Thing” কথার উদ্দেশ্য সেই জিনিস যা আপনার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ,  অথবা যার উপর সব ইচ্ছাশক্তি,  মানসিক শক্তি নিবেশ করে আমরা ফল পেতে চাই। সফলতার জন্য অনেক কিছু করার দরকার নেই, শুধু একটি জিনিস যেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, তার উপর দক্ষতা লাভ করে তাকে ফলপ্রসূ করতে হবে। যেমন রোনাল্ডো র জন্য The One Thing হলো ফুটবল। দালাই লামার জন্য The One Thing হলো বিশ্ব শান্তি। আবার” Elon Musk” এর জন্য হলো সহজ ভবিষ্যৎ পাওয়া । এঁরা যদি এই একটি জিনিস কে অনুসরণ না করতেন তাহলে এমন কিছু করতেন যা নিজে চান না। এই One Thing  কে দৈনন্দিন জীবনেও কাজকে পছন্দ করতে ব্যবহার করা যায়। কি সেই একটি জিনিস যা আপনার জন্য খুন গুরুত্বপূর্ণ সেটি খুঁজতে হবে এবং করতে হবে। আরেকটি কথা   হলো দুই তিনটি কাজ একবারে করা হলে সেই কাজগুলি ভালোভাবে করা কঠিন হয়ে যায়। একবার যদি আপনি দুটি খরগোশ ধারার চেষ্টা করেন তাহলে সেটা খুব কঠিন।

                                                                                 


 

Domino Effect:-যেমন একটি ডমিনো তার দুইগুণ ডমিনো কে ফেলতে পারে, তেমনি আমরা রোজ ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে বড় কিছু জিনিস করতে পারি । এই ভাবনা আপনাকে আশ্চর্য মনে হাতে পারে কিন্তু ডোমেন ইফেক্ট এর ক্ষমতা এর নির্দিষ্ট বিশেষতা থেকে বুঝা যায়। শুরুর ডমিনো কে আমরা শুধু দুই ইঞ্চি এর ডমিনো ভেবে অবহেলা করতে পারি সেই ডমিনো তার তার প্রভাব অনুসারে যদি প্রত্যেকবার দ্বিগুন আকারের ডমিনো কে একসাথে লাগাই তাহলে ৫৭তম ডমিনো এর আকার পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত বড় হবে। আশা করি ধারাবাহিকতার এই ক্ষমতা বুঝতে অসুবিধা হয় নি। যদি আপনি এই ডমিনো পদ্ধতি তে নিজের ক্ষমতা কে প্রতিদিন ব্যবহার করেন তাহলে বিরাট বড় কিছু করা সম্ভব।

                                             


                                            

তিনটি সবথেকে মিথ্যা যা আমরা বহুদিন থেকে স্বীকার করে আসছি অথবা সত্যি মনে করে আসছি তা হল:-

১)সবজিনিসের গুরুত্ব সমান:- মানবিক অধিকার এর জন্য সমতা প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু নিজস্ব জীবনে সবকিছু জিনিস সমান মূল্য রাখে না। দুটো ছাত্র  কখনোই  সমান হাতে পারে না। যখন কোনো ব্যক্তি তাড়াতাড়ি বা জলদাজলদি তে থাকেন তখন সবকিছু  সমান মনে হয়।এবং সেই জন্যই ভালোভাবে না বুঝেশুনে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে সেই কাজটি করেন এবং এইভাবে নিজের সময় ও মানসিক শক্তি দুটোই নষ্ট করেন।

২)Multitasking:-মাল্টিটাস্কিং কে অনেক ব্যক্তি প্রোডাকটিভ মনে করেন। কিন্তু সেটা বাস্তবে হয় না। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে মানুষের মস্তিস্ক একসাথে একাধিক কাজে মন নিবেশ করতে পারে না। কিন্তু লোক মাল্টিটাস্কিং এই ভেবে করেন যে আলাদা আলাদা করে সময় করে দুই কাজই শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু দেখা যায় ফলস্বরূপ কাজগুলি হয়ত সঠিক ফল দিতে পারে না অথবা কাজগুলি করতে বেশি সময় নিয়ে নেয়।

৩)Balanced life  :-ব্যালান্সড লাইফ হলো একটি মিথ্যা। যদি আপনার এক্সট্রা অর্ডিনারি রেজাল্ট দরকার অথবা অর্থাৎ যদি জীবনে বড় কিছু পেতে চান তাহলে জীবনের কিছু জিনিস আপনাকে বাদ দিতে হবে। যদি প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজেই ব্যস্ত থাকেন এবং নিজের লক্ষ্য কে রোজ কম সময় দেন, তাহলে নিজের লক্ষ্য পথে সাফল্য লাভ ও কম হবে। আপনি একাধিক কাজকে বার বার ব্যালান্স করে চলতে পারেন না।

Life with Purpose :-আমাদের  উদ্দেশ্য আমাদের প্রায়োরিটি কে নির্ধারণ করে। আমাদের উৎপাদন নির্ভর করবে আমরা কিভাবে এবং কত গুরুত্ব সহকারে কাজ করবো তার উপর। যখন আমরা যা চাই তা যদি পেয়ে যাই, তখন মনের সন্তুষ্টি জাগে। মার্কিন মনস্তত্ববিদ মার্টিন শ্যালিগমান বলেন আমাদের খুশি পাঁচটি জিনিস এর উপর নির্ভর করে ১)ধনাত্বক আবেগ ২) আনন্দ ৩) প্রাপ্তি ৪) অন্যের সাথে সম্পর্ক এবং ৫) অন্যের সাথে সংযোগ এবং জীবনের অর্থ। যদি আপনার প্রতিদিনের কাজ আপনার যে মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে সেই উদ্দেশ্যে করেন তাহলে আপনার খুশি দীর্ঘদিন থাকবে।

 

Live with Priority:-প্রায়োরিটি ছাড়া আপনার উদ্দেশ্য ক্ষমতাহীন। আপনারউদ্দেশ্য প্রাপ্তির জন্য এবং ওই উদ্দেশ্যের লক্ষ্যে চলার জন্য প্রায়োরিটি সেট করতে হবে। এবং আপনার প্রায়োরিটি কে ধ্যান দিয়ে কর্ম করতে হবে। যদি আপনি কাজ করার বদলে অন্য কিছু যেমন সোশ্যাল মিডিয়া তে সময় নষ্ট অথবা আড্ডাবাজি তে সময় নষ্ট করেন, তাহলে অবচেতন গত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া অথবা আড্ডাবাজি টাই হলো আপনার প্রায়োরিটি। অর্থাৎ আপনি অবচেতন গত ভাবে ভুল অগ্রাধিকার নির্ধারণ করলেন যা আপনার প্রকৃত উদ্দেশ্য কে সহকারী নয়। সবথেকে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো আপনার অগ্রাধিকার আপনার উদ্দেশ্যের সাথে সহযোগী হতে হবে।

Live with Productivity:-ব্যক্তির সফলতা ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করার জন্যে হয় না। বরং তার  উৎপাদনশীলতার উপর নির্ভর করে। যিনি যত উৎপাদনশীল তিনি তত সফল। প্রোডাকটিভ লোক নির্দিষ্ট একটি কাজে মনোনিবেশ করেন একাধিক কাজে নয় বা অপ্রয়োজনীয় কাজে নয়। কম সময়ে বেশি উৎপাদনশীল হতে গেলে আপনার সময় কে নির্দিষ্টামুখী করার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। সময় কে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নির্দিষ্টমুখী করতে জানতে হবে।

The Focusing Questions :- আপনার মনকে রোজ একটি প্রশ্ন দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কি? সেই উদ্দেশ্য পুরণ করার জন্য আপনি কি পরিকল্পনা করেছেন বা করছেন ? আপনার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কত সময় দিচ্ছেন?  কতটা মানসিক,  বৌদ্ধিক এবং শারীরিক শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছেন? কতটা প্রতিদিন নিজের উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন?  আর কত উদ্দেশ্য বাকি?  উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কি কি সাধন বস্তু প্রয়োজন? তার জোগাড় এর জন্য কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বা নিতে হবে? এরকম সব উদ্দেশ্যমূলক মনোযোগী প্রয়োজনীয় প্রশ্ন প্রতিদিন  ১০ মিনিটের জন্য রোজ সকালে নিজের অন্তরাত্মা কে করতে হবে। এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা আপনার মস্তিস্ক কে শুধু আপনার উদ্দেশ্যের জন্য মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে আপনার উদ্দেশ্যের পথে চালিত করবে।

 তিনটি চোর যা আপনাকে ধোঁকা দেয় :-

১) কাউকে "না" বলতে না পারা :-লোক অন্যের নজরে যাতে খারাপ না হন,  সেই জন্য অন্যদের "না" বলার থেকে বেশি "হ্যাঁ" বলেন। যদিও তাতে তাঁদের সময় নষ্ট হয় অথবা  অন্য কিছু ক্ষতি হয়। কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অপ্রয়োজনিত সত্বেও "হ্যাঁ" বলে নিজের লক্ষ্যের বা উদ্দেশ্যের ক্ষতি পর্যন্ত করা হয়, যেটা উচিত নয়। শুধু সেই সব জিনিস কে "হ্যাঁ" বলতে হবে যা সবথেকে জরুরি। আর সেই সব জিনিস কে না বলতে হবে যা গুরুত্বপূর্ণ নয় অথবা আপনার সময় কে নষ্ট করবে।

২)the Poor Health Habit :- আপনার স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নেওয়া দরকার।যদি আপনি আপনার শরীর এর সঠিক যত্ন না করেন তাহলে শরীর সুস্থ রাখা কঠিন হবে।কিছুলোক সফলতা পাওয়ার জন্য এতটাই উৎসর্গ করে দেন,  যে মন ও শরীর কে যথেষ্ট বিশ্রাম দেন না। নিজের খাবার সময়মতো খান না, বা শরীর চর্চা ঠিকমতো করেন না।কিন্তু বাস্তব সফলতা হলো ধনসম্পত্তির  সাথে সাথে সুস্থ শরীর লাভ। রোজ শারীরিক চর্চা করা দরকার এবং সাথে রোজ পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করা দরকার।

3)The Outside Environment:- আরেকটা জিনিস আমাদের সাফল্যের পথে সহযোগী হয় অথবা অসুবিধা করে তা হলো বাইরের পরিবেশ। এখানে পরিবেশ বলতে বুঝায় পারিপার্শিক পরিবেশ,  অবস্থা, অথবা পারিপার্শিক ব্যক্তি,  এমনকি আমাদের আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধব কেও ধরা যায়। যদি আপনার পরিবেশ খারাপ হয় তাহলে সেটাও আপনার ক্রিয়াশীলতাকে প্রভাবিত করবে। আপনি এমন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখুন যে আপনার উদ্দেশ্য কে সমর্থন করে বা সহযোগিতা করবে এবং আপনাকে ধনাত্বক এবং উৎপাদনশীল হতে উৎসাহিত করবে। আপনি এর জন্য সফলতা সম্পর্কীয় অনলাইন গ্রুপ এ সংযোগ রাখতে পারেন বা সমাজের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সমাজসেবী সংস্থার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারেন। লক্ষ্য বিষয়ক জ্ঞান এবং উৎসাহ পেতে Youtube এ সেই সম্পর্কীয় বিভিন্ন দেশে বিদেশের সফল ব্যক্তিদের ভিডিও দেখুন, অথবা তাঁদের সম্বন্ধে এবং আপনার লক্ষ্য বিষয়ক প্রবন্ধ বা বই পড়ুন। তা আপনাকে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকতে এবং উদ্দেশ্যে সফলতা পেতে জ্ঞান  এবং শক্তি যোগাবে। Internet এর মাধ্যমে আপনি অনেক মেন্টর বা প্রশিক্ষক এর সহযোগিতাও পাবেন। 

 

উপরের সারবস্তু বিখ্যাত লেখক এবং ‘Real estate entrepreneur’ “Gary Kellerএবং Jay Papasanএর যুগ্মভাবে লেখা বই "The One Thing " থেকে গৃহীত। বইটি অবশ্যই পড়বেন।

 

 

Post a Comment

0 Comments