" আত্মজ্ঞান " কি?( Atmagyan ..the self realization. )

 "আত্মজ্ঞান"...আত্মার সাথে পরিচয় :-

রাজা জনক গুরু অষ্টাবক্রকে জিজ্ঞাসা করলেন "হে প্রভু জ্ঞান প্রাপ্তি কি ভাবে হয়?  আত্মঅজ্ঞান কি?  মুক্তি কিভাবে প্রাপ্তি হয়?  বৈরাগ্য কিভাবে লাভ করা যায়? এসব আপনি আমাকে বলুন।

ঋষি অষ্টাবক্র উত্তর দেন-যদি আপনি মুক্তি চান তাহলে মন থেকে সব বিষয়বস্তু উপভোগের ইচ্ছা ত্যাগ করে দিন। ক্ষমা, সততা, দয়া, সন্তোষ, তথা সত্যকে অমৃতের মতো পান করুন। আপনি অগ্নি পৃথিবী বায়ু জল আকাশ কিছুই নন। মুক্তি পেতে গেলে তত্বের সাক্ষী চৈতন্য স্বরূপ আত্মা কে জানুন।

যদি আপনি নিজেকে শরীর থেকে আলাদা ভেবে চেতনায় বিশ্রাম করেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ সুখ শান্তি এবং বন্ধন মুক্ত অবস্থা প্রাপ্তি হবেন।আপনি ব্রাহ্মণ আদি সকল জাতি থেকে এবং ব্রহ্মচর্য আদি সকল আশ্রম এর থেকেও শ্রেষ্ঠ এবং চোখে অদৃশ্যসমান। আপনি নির্লিপ্ত, নিরাকার এবং এই বিশ্বের সাক্ষী, এটা জেনে সুখী হন।ধৰ্ম অধর্ম দুঃখ তো মস্তিষ্কের সাথে জড়িত, সর্বব্যাপী আপনা থেকে নয়। আপনি না কর্তা  না ভোক্তা, আপনি সাদা মুক্তই আছেন।

সমস্ত বিশ্বের আপনিই একমাত্র হৃষ্টা এবং সদা মুক্ত। এবং আপনার বন্ধন শুধু এইটুকুই যে আপনি অন্য কাউকে হৃষ্টা মনে করেন। অহংকার রূপী মহাসর্পের প্রভাবে আপনি মেনে নিচ্ছেন যে আপনিই কর্তা,  এই বিশ্বাস কে পান করে সুখী হন। আপনি এক বিশুদ্ধ জ্ঞান যার অগ্নির তেজে অজ্ঞানতাকে জ্বালিয়ে দেয়। আপনি যদি মনে করেন আপনি মুক্ত তাহলে আপনি মুক্ত এবং আপনি যদি মনে করেন আপনি বদ্ধ, তাহলে আপনি বদ্ধ। যার যেমন বুদ্ধি তার তেমন গতি হয়। আত্মা বাস্তবে সাক্ষী, সর্বব্যাপী পূর্ণ, এক,  মুক্ত, চেতন,  অক্রিয়,  ইচ্ছা শক্তি রহিত এবং শান্ত। ভ্ৰমবাস একে সাংসারিক মনে হয়। অপরিবর্তনীয় চেতন এবং অদৈত্য আত্মা কে চিন্তন করে আপনি এই ভ্ৰম রূপী অভ্যাস থেকে মুক্ত হয়ে যান। ভাবুন বাহ্যিক সমগ্র বিশ্ব আপনাতেই সমাহিত আছে। ঋষি অষ্টাবক্র বলেন হে পুত্র, বহুকাল থেকে "আমি এই শরীর"এই ভাবনায়  বাঁধা আছে। নিজেকে জ্ঞান রূপী তলোয়ার দিয়ে কেটে এই বন্ধন থেকে মুক্ত হও। 

আপনি অসঙ্গ,  অক্রিয়, স্বয়ং প্রকাশবান এবং সর্বদোষমুক্ত। ধ্যানের মাধ্যমে মস্তিস্ক কে শান্ত করার চেষ্টাটাই আসলে বন্ধন। এই বিশ্ব আপনার দ্বারাই পরিব্যাপ্ত। এবং আপনি একে ব্যাপ্ত করেছেন। আপনি শুদ্ধ এবং জ্ঞান স্বরূপ। নিজেকে ছোট মনে করে ব্যস্ত থাকবেন না। আপনি ইচ্ছা রহিত, বিকার রহিত এবং শীতলতার ধাম। শান্ত হয়ে কেবল চৈতন্য ইচ্ছাধারী হন। আকার কে অসত্য মনে করে নিরাকারে চিরস্থায়ী হয়ে যান। এই তত্ব কে জ্ঞাত হওয়ার পর পুনর্জন্ম আর হবে না। পরমাত্মা এই শরীর এর ভিতরেও বাস করেন এবং বাইরেও বাস করেন। শাস্বত এবং সতত পরমাত্মা সমস্ত প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান। যেমন জল, ঢেউ এবং ঢেউ এর ফেনা পৃথক নয়,  তেমনি আত্মা নিজ থেকে বাহির হওয়া এই বিশ্ব থেকে আলাদা নয়। যেরকম ভাবে বস্ত্র বাস্তবে সুতো থেকে উৎপত্তি তেমনি এই বিশ্ব আত্মারই রূপ। বাস্তবে এই আত্মাই সৃষ্টির স্বরূপ। ভ্ৰম বশে একে সৃষ্টিরূপে দৃষ্ট হয়। প্রকাশই আমার স্বরূপ, সেই প্রকাশ যা বিশ্ব কে প্রকাশিত করে। আমা থেকে উৎপন্ন এই বিশ্ব আমাতেই বিলীন হয়ে যায়। যেমন মাটির পাত্র মাটিতে এবং ঢেউ জলের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। আমি এই শরীর ধারী হয়েও আমি এই সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত।  না আমি যাই, না আমি আসি। আমি নিজেকে স্পর্শ না করেই অনাদিকাল থেকে এই বিশ্ব কে ধারণ করে আছি।                                                                                                 


দ্বয়িত্বভাব অর্থাৎ ভেদ ই হলো সমস্ত দুঃখের মূল কারণ। আমি এক চৈতন্য এবং নির্মূল স্বরূপ। আমি কেবল জ্ঞান স্বরূপ, আমি আশ্রয় রহিত। আমার না আছে কোনো বন্ধন, না আছে কোনো মুক্তি। আমাতে স্থিত এই বিশ্বও বস্তুত আমাতে স্থিত নয়। এটা নিশ্চিত যে এই শরীর এবং এই বিশ্ব অস্তিত্বহীন। শুদ্ধচৈতন্য আত্মারই শুধু অস্তিত্ব আছে, এর বেশি কিছু কল্পনা করার নাই। শরীর, স্বর্গ, নরক, মোক্ষ আর ভয় এসব কল্পনা মাত্র। এতে চৈতন্যস্বরূপ এর কি প্রয়োজন?  আশ্চর্য যে অন্যজন এর মধ্যেও আমি অন্যজন কে দেখতে পাই না। তাহলে কার জন্য মোহ করবো?  না এই শরীর আমি, না এই শরীর আমার। আমি জীব, আমি তো চৈতন্য। আমার মধ্যে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই তো বন্ধন। বাস্তবে আমার জন্মও নেই মৃত্যুও নেই।

ঋষি অষ্টাবক্র বলেন "আত্মাকে অবিনাশী এবং এক জেনো, নিজেকে অজ্ঞান বসত  বস্তুর সঙ্গে বাঁধা হয়ে যায়। আত্মা তো চৈতন্য, শুদ্ধ এবং অত্যন্ত সুন্দর। তাহলে জ্ঞানেন্দ্রিয়তে আসক্ত হয়ে এই মলিনতা কেন?  জানো যে তুমিই সবপ্রাণীতে স্থিত এবং তোমাতেই সবপ্রাণী স্থিত। তাই মমতা ভাবনা তৈরি হওয়াটাই আশ্চর্য। একব্রহ্ম তে  আশ্রয় গ্রহণকারী এবং মোক্ষ এর জ্ঞানী কে আমোদ প্রমোদ দ্বারা উৎপন্ন কামনা দ্বারা বিচলিত হওয়া টাই আশ্চর্য।"

ইহলোক এবং পরলোক থেকে মুক্ত, এক, নিত্য এবং অনিত্যের জ্ঞানীর মোক্ষলাভ এ ভয়ভীত হওয়া টাই একরকম  আশ্চর্য। সদা আত্মদর্শনকারী বুদ্ধিমান ব্যক্তি না প্রসন্ন হন, না দুঃখিত হন। যে ব্যক্তি নিজ শরীর কে এবং অন্য শরীর কে আলাদা দেখেন না তাকে প্রশংসা অথবা নিন্দা বিচলিত করবে কিভাবে? 

 সমস্ত জিজ্ঞাসারহিত এই বিশ্ব কে মায়া কল্পনাকারী স্থিতপ্রজ্ঞা ব্যক্তি আসন্ন মৃত্যকে ভয় করে না। নিরাশাতেও সমস্ত ইচ্ছা রহিত স্বয়ং কে জ্ঞানের মাধ্যমে প্রসন্ন মহাত্মার আর কার সাথে তুলনা করা যায়? বিষয় এবং আন্তরিক আসক্তিকে ত্যাগ কারী,  সন্দেহমুক্ত ইচ্ছাধীন ব্যক্তিকে স্বতঃআগত ভোগ বস্তু দুঃখী অথবা সুখী করতে পারে না। ঋষি অষ্টাবক্র বলেন যিনি নিজ আত্মাকে জানেন তিনি বাহ্যিক এই সংসার পরিস্থিতি কে খেলা রূপে গ্রহণ করেন। তাঁকে সাংসারিক স্থিতিতে বোঝা রূপে গ্রহণকারী ব্যক্তির সাথে তুলনা করা যায় না। সেই ব্রহ্মাকে জ্ঞাত হওয়ার পর অন্তঃকরণে পাপ অথবা পুণ্যের স্পর্শ হয় না। যে মহাপুরুষ নিজেকেই সমস্ত জগৎরূপে জানেন তাঁর সেচ্ছাকে বর্তমান স্থিত কারো আটকানোর সামর্থ নেই। ব্রহ্ম থেকে ঘাস পর্যন্ত সমস্ত প্রাণীর মধ্যে শুধুমাত্র আত্মজ্ঞানীই ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা কে ত্যাগ করতে সমর্থ হয়। যিনি আত্মাকেই ঈশ্বর এবং জগৎকেই ঈশ্বর জানেন তিনি কোনো প্রকারে ভয়ভীত হন না। 

ঋষি অষ্টাবক্র বলেন "তোমার কারো সাথে সংযোগ নেই। তুমি শুদ্ধ, তাই তুমি কি ত্যাগ করতে চাও? সম্মিলন বস্তু কে সমাপ্ত করে দিয়ে ব্রহ্মযোগে একরূপতাকে প্রাপ্তি করো। যেমনভাবে সমুদ্রের মধ্যে ফেনার সৃষ্টি হয়, তেমনি এই বিশ্ব এক আত্মা থেকেই উৎপন্ন হয়েছে। ওই সমুদ্রেই বিলীন হবে। নিজে দুঃখ এবং সুখকে সমান, আশা এবং নিরাশার মধ্যে সমান এবং জীবন ও মৃত্যু কে সমান সত্য জেনে একরূপ ব্রহ্মকে প্রাপ্তি করো।"

আমি সমস্ত প্রাণীতে আছি এবং সমস্ত প্রাণী আমাতে আছেএটাই জ্ঞান। শুধু একরূপে স্থিত হওয়াটাই দরকার।

ঋষি অষ্টাবক্র বলেন..বন্ধন তখনই আছে যখন মন কিছু ইচ্ছা প্রকাশ করে,  শোক করে,  কিছু ত্যাগ করতে চায়, বা কিছু গ্রহণ করতে চায়,  কখনো প্রসন্ন হয়, তো কখনো ক্রোধিত হয়। কিন্তু মন যখন ইচ্ছারহিত হয়,  শোক করে না কোনো কিছু গ্রহণ বা ত্যাগ করে না। ক্রোধ বা আনন্দিত হয় না, তখনই মুক্তি লাভ হয়। কোনো কিছুর আসক্তি রহিত হতে পারলেই মুক্তি লাভ সম্ভব। যতক্ষন আমি বা আমার ভাব আছে ততক্ষন বন্ধন আছে। আমি বা আমার ভাব নষ্ট হলেই মুক্তি।

সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে অনায়াস সিদ্ধি কে প্রাপ্তিলাভ করুন।......


(  শ্রী "অষ্টাবক্র গীতা" থেকে "আত্মজ্ঞান" তত্ব সংগৃহিত।)


উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like  এবং Share করুন।...


আরো পড়ুন:-আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ , 

                  সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,

                  ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস

For Motivational Articles In English visit......www.badisafalta.com 

Post a Comment

0 Comments