জাপানিদের উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং সফল জীবন যাপনের গোপন সূত্র ( "IKIGAI" A Japenese secret for happy and Successful life.) :-

 

“AIKIGAI” যে পদ্ধতি কে অনুসরণ করে জাপানিরা আজ সফল....

 “AIKIGAI” হলো সফল ভাবে জীবন কে অতিবাহিত করার জাপানিজ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকেই প্রয়োগ করে আজ জাপানি রা এতো সফল, জাপান এতটা উন্নত। উদ্দেশ্যপূর্ন সফল এবং সুখী জীবন কি ভাবে তৈরি করা যায়, তারই জাপানিজ পদ্ধতি হলো AIKIGAI


এই পদ্ধতি আপনাকে এমন জীবনশৈলী তৈরি করে দেবে যাতে তুমি যখন ঘুমথেকে উঠবে, তখন মন তরতাজা তাকবে, উজ্জীবিত  থাকবে, খুশিতে ভরপুর থাকবে এবং প্রতিদিন তুমি ক্রমান্যয়ে উন্নতির এবং সফলতার শিখরে যেতে থাকবে তবে এই পদ্ধতিকে সঠিকভাবে জানতে হবে এবং প্রয়োগ করতে হবে, তবেই সেটা সম্ভব।

 AIKIGAI বলে তোমার জীবনের সবথেকে উদ্দেশ্য পূর্ণ জীবন কে বাস্তবায়িত করাই  হলো সফলতা।

সবার জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করার ইচ্ছা থাকে, বা বিশেষ কিছু প্রাপ্তির আকাঙ্খা থাকে। সেই ইচ্ছা বা আকাঙ্খা কে পূরণ করতে পারলেই জীবন সফল মনে হয়।

তুমি যে কাজটিকে ভালোবাসো  সেটিকে বাস্তবায়িত করতে যদি খুব পরিশ্রম বা কাঠিন্যের মাধ্যমে যেতে হয়, তবুও সেই কাঠিন্য বা কষ্ট তোমাকে বিচলিত করতে পারে না যখন তুমি তোমার পরম পছন্দের কাজটি করো এবং একটু একটু করে উদ্দেশ্যটি সফলতার দিকে এগোতে থাকে, তখন মনে হয় জীবন যেন প্রতি পদে উপহার দিচ্ছে।

এমনটি হলে দেখবে প্রতিদিন যখন তুমি ঘুম থেকে উঠবে এবং সেই উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তন করবে, তখন মন উৎফুল্ল হয়ে উঠবে। তুমি যে উদ্দেশ্যে কাজ করতে ভালোবাসো  সেটি সম্পন্ন করতে তোমাকে যাই দক্ষতা অর্জন করতে প্রয়োজন পড়ুক না কেন, সেই দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জন করতে যাই পরিশ্রম করার প্রয়োজন পড়ুক না, কেন তুমি ক্লান্ত হবে না।

তোমার কাজের উদ্দেশ্য একটি মহৎ উদ্দেশ্য হতে হবে।

অর্থাৎ সেই কাজটির সঙ্গে একটি বিশেষ সামাজিক কল্যাণ সংযুক্ত থাকতে হবেঅথবা একটি বিশেষ সামাজিক সমস্যার সমাধান থাকবে।

“AIKIGAI” এর চারটি বিশেষ স্তম্ভ হলো:-

১)জীবনে এমন কিছু করো যা তুমি করতে ভালোবাসো

২)কাজটি হবে এমন কোনো কাজ যেটি করতে তুমি  সত্যিই ইচ্ছুক। সেই কাজের সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে কিছু সাধন জোগাড় বা দক্ষতা সংগ্রহের প্রয়োজন হোক না কেন, তুমি কোনো কষ্টতেই পিছুপা হবে না। অর্থাৎ সেই কাজে কাঠিন্য এলেও তুমি উৎফুল্ল থাকবে

৩)দেখবে সেই কাজের সঙ্গে যেন একটি বড় বিশেষ সামাজিক উদ্দেশ্য থাকে।

৪)এই উদ্দেশ্য এমন এক উদ্দেশ্য যার প্রতি পদের  সফলতা প্রাপ্তি তোমাকে  খুব আনন্দ দেবে।

“AIKIGAI” পদ্ধতি দুইরকমের:-১) অর্ধ “AIKIGAI”  এবং ২) পূর্ণ “AIKIGAI”  

 

অর্ধ “AIKIGAI” হলো।:- যেটা করতে ভালোবাসো  সেটাই করছো এবং তুমি যেটা করতে দক্ষ সেটাই করছো

 যদি তুমি এমন কোনো কাজ করছো  যেটা করতে তুমি ভালোবাসো  এবং তোমার মনে হয় তুমি সেটা ভালোভাবে করতে পারবে, তাহলে সেই কাজটিই হলো তোমার করণীয় যোগ্য কাজ। এমন কাজে তুমি সঙ্গে সঙ্গেই আনন্দ পাবে। এরকম কাজে রোজগার না এলেও মানসিক সন্তুষ্টি আসবেই।

১) তুমি যে কাজটি পছন্দ করো সেটিই করো।

২)তুমি যে কাজটি ভালোভাবে করতে পারো সেটিই করো।

 

আর পূর্ণ “AIKIGAI”:-ই কাজে নীচের চারিটি উদ্দেশ্য জুড়ে থাকবে।

১)কাজটি এমন হবে যেটা করতে তুমি ভালোবাসো

২) কাজটি এমন হবে যেটা করতে তুমি দক্ষ ।

৩)তোমার কাজটি এমন হবে যা সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার  সমাধান করবে অথবা সমাজকে আরো উন্নত হতে সাহায্য করবে।

4) কাজের ফলাফল যাই হোক না কেন, কাজটি করতে প্রতিপদে তোমাকে আনন্দ এবং সন্তুষ্টি দেবে।

“AIKI” কথার অর্থ হলো জীবনে পরিবর্তন আনা। এবং

“GAI” কথার অর্থ হলো জীবনের মূল্য।

অর্থাৎ জীবনের মূল্য কে বাস্তবায়িত করাই হলো “AIKIGAI” এর উদ্দেশ্য। “AIKIGAI” জীবনে সামান্জ্ঞস্য নিয়ে আসে এবং জীবন কে ফলপ্রসূ করে।

 

তবে কথা হলো জীবন কখনও ব্লুএপ্ৰিন্ট তৈরি করে নিয়ে আসে না। সেটা তোমাকে করতে হবে।কি করবে?” তার মনন, “কি তোমার উদ্দেশ্য হবে?” তার চিন্তন,  এবং সেটা কি পদ্ধতিতে  বাস্তবায়িত করবে?” সেই পথ খুঁজে বের করা, এই সব দায়িত্ব তোমার নিজের। এসব ব্লুএপ্ৰিন্ট  আগে থেকেই তৈরি করে রাখা অবস্থায় পাবে  না।

তুমি যে মহৎ উদ্দেশ্য চিন্তন করবে, মনে হবে সেটি করা সহজ। কিন্তু বাস্তবে করতে গিয়ে দেখবে সেটাতে কাঠিন্য আসছে তবে তার উদ্দেশ্য কে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে থাকো, চেষ্টা করতে থাকো, দেখবে করতে গিয়ে খুব  আনন্দ পাবে। সেই কাজের প্রতিপদের ছোট ছোট মুহূর্ত তোমার জীবন কে খুব খুশি করবে।

 

সাধারণ ব্যক্তিদের  জীবন হলো:- ঘুম থেকে উঠা, নিজের বাঁচার জন্য খাদ্য জোগাড়, বস্তু জোগাড়, বাসস্থান জোগাড়, পরিবার স্বচ্ছলতার জন্য আর্থিক জোগাড় এসব দৈনন্দিন কাজ তো আছেই এটা শুধু মানুষই নয়, প্রত্যেক জীবই নিজের জীবন স্বচ্ছলতার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে

                               

      



কিন্তু “AIKIGAI” হলো এরও উপরের এক বিশেষ উদ্দেশ্য, যা বারবার জন্য মনে করিয়ে দেয় যে তুমি এই পৃথিবীতে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে কাজ করবার জন্য এসেছো

জীবন সহজ সরল হয় না। উপরে নিচে, ডাইনে বাঁয়ে হতে থাকে।এবং তাই তুমি কোন দিকে যাবে তার নির্ণায়ক তুমি নিজে। অন্যের কথায় চলবে না, নিজে সিদ্ধান্ত নাও।যদি অন্যের কথায় তুমি চলো, তাহলে নিজের নিজের ইচ্ছে মতো জীবনকে অতিবাহিত করা সম্ভব হবে না।

যখন তুমি কোনো দিকে যাত্রা শুরু করো, সেই দিকে যাত্রাস্থল থেকে গন্তব্যস্থল খুব দূরে থাকলে তা খুব স্পষ্ট দেখা যায় না।কিন্তু সেই দিকে ক্ষনে ক্ষনে যতই এগোতে থাকো আগের রাস্তা ততই পরিষ্কার ভাবে দৃশ্যমান হতে থাকে।

এমনটাই আমাদের জীবনেও ঘটে।যখন খুব দূর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তন করা হয়, তখন সেটার বাস্তবিকতা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা থাকে না।কিন্তু যতই সেই উদ্দেশ্যকে ধরে কাজ করতে করতে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া যায়, ভবিষ্যৎ ততই স্পষ্ট হতে থাকে।

দেখবে কর্মস্থলে বাধা আসবে, কাঠিন্য আসবে, এবং সেই বাধাকে যতই তুমি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকবে জীবনের সন্তুষ্টিও ততই বড়ো হতে থাকবে।

তোমার বাবা মা হয়তো তোমাকে বলবে যা খুব পড়াশুনা করো, বড়ো ডিগ্রী নাও, তারপর চাকুরী জোগাড় করো, তারপর বিয়ে করো এবং সুখে সংসার করো। এটাই সাধারণ সামাজিক নিয়ম। এতে বাবা-মা র কোনো দোষ নেই। তাঁরা চান তোমার  জীবনে আর্থিক এবং মানসিক স্বচ্ছলতা আসুক  এবং আপনার জীবন সুখময় হোক।বাবা-মা যদি এটা চান তাতে কোনো ত্রুটি নেই।এটা দৈনন্দিন সাধারণ জীবনের প্রয়োজনীয়তা বটে।

কিন্তু অন্য জীবের তুলনায় মানব জীবন একটু অন্যরকম।মানুষ বিশেষ জীব তাই প্রত্যেক মানুষের এই পৃথিবীতে আসার এক বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।তোমারও আছে। সেই বিশেষ উদ্দেশ্য ফলপ্রসূ না হওয়া পর্যন্ত জীবন স্বচ্ছল হলেও সফল নয়। আর যদি জীবন সফল না হয় তবে জীবন পরিপূর্ণ হবে না।

উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনটি হলো এইসব দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তার বাইরে।

কি সেই জীবন ?  সেই জীবনটি হলো অর্থপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ, উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবন।

তুমি কি কি বিশেষ প্রাপ্তিলাভ করতে চাও ? বা কি কি বিশেষ কাজ কাজ করতে ভালোবাসো ? এই প্রশ্নের মধ্যেই IKIGAI লুকিয়ে আছে। এখানে তোমার  জীবনের বিশেষ উপহার লুকিয়ে আছে।

জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবা, চিন্তন করা এবং তাকে বাস্তবায়িত করতে পারা,  এর মধ্যে দূরত্ব আছে।

 

স্কুল শিক্ষক অভিভাবক হয়ত বলেন তুমি এই বিষয়ে দুর্বল তাই এই বিষয় নিয়ে পরিশ্রম বেশি করো। এটা হলো সাধারণ জীবনের  কাজ।

 কিন্তু উদ্দেশ্য পূর্ণ সফল জীবনের উদ্দেশ্য বলবে:- তুমি যে বিষয়ে দুর্বল সেটা নিয়ে কাজ করো না, তুমি যে কাজে দক্ষ সেই বিষয়ে কাজ করো।

যখন তুমি তোমার দক্ষ বিষয়ে আরো কাজ করবে, তখন তুমি অন্যদের তুলনায় সফলতার দিকে খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে।এক্ষেত্রে তুমি বেশি সফল হবে। তোমার সম্পূর্ণ মানসিক শক্তি যখন ওই কাজ করতে ঢেলে দাও , তখন তোমার বৃদ্ধি অনেক গুন্ বেড়ে যায়। 

 

তোমাকে দেখতে হবে প্রতিদিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে কত ঘন্টা তোমার উদ্দেশ্যের জন্য দিচ্ছো। এর উপর তোমার সফলতা নির্ভর করছে।

যখন তুমি শিশু ছিলে তখন তুমি তোমার সময়ের সমস্ত অংশই নিজের ইচ্ছায় এবং নিজের খুশিতে অতিবাহিত করেছ।কিন্তু যখন তুমি  প্রাপ্তবয়স্ক হলে তখন রোজগার বা পারিবারিক দায়িত্ব প্রাধান্য পেল। এবং সেই নিজের ইচ্ছাতে নিজের জীবন কে খুশিমতো অতিবাহিত করার যে উদ্দেশ্য সেটা কমে যেতে থাকলো।

কথা হলো জীবনের প্রতি পদে আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং পরিবার অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু তার সাথে যদি জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যই বাদ পড়ে যায়, তাহলে মানব জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে।

 জীবনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য কে হত্যা করা আত্মহত্যা করারই সমতুল্য।

যদি তুমি  যা করতে ভালোবাসো সেটা করতে পারো, এবং তার মধ্যে যদি মহৎ সামাজিক উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তুমি অসীম ক্ষমতাশালী এবং সফল ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবে। শুধু সচ্ছল ভাবে বেঁচে থাকাটাই জীবন নয়। জীবন কে সফল করতে হলে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে এবং আনন্দপূর্ণভাবে বাঁচতে জানতে হবে।

মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু , মাদার টেরেসা, সাইমন,ইত্যাদি বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনী দেখো, তাঁরা তাঁদের নিজের ইচ্ছায় নিজের জীবনকে অতিবাহিত করেছেন।   

 

         

গান্ধীজি একজন উকিল হলেও ওকালতি না করে সমাজসেবী হয়েছেন। মানুষের সাহায্যের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও তাই করেছেন।  তিনি আই সি এস পাস করেও চাকুরী গ্রহণ না করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ম্যাথিউরিকা একজন পরমাণু বিজ্ঞানী হয়েও শেষে বৌদ্ধ সন্যাসী র পথ বেঁচে নিয়েছেন। এঁরা সবাই নিজের অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে সেভাবেই জীবনকে প্রবাহিত করেছেন।

তুমিও তাই করো। তোমার মন বিবেক যেটা করতে বলে সেটাই করো।

একদিন সবাই তো মারা যাবে, কিন্তু তার আগে কিভাবে বাঁচতে হয় তা শিখতে হবে। যখনই তুমি তোমার “AIKIGAI” এর উপর মনোনিবেশ করো, তখন মন তোমার আসল অস্তিত্বকে খুঁজে পায়, তোমার সব শক্তি জেগে ওঠে।জীবনের লক্ষ্য পরিষ্কার থাকলেই মহৎ জীবন তৈরি হয়। মহান ব্যক্তিরা সেটাই করেছেন।

 

“AIKIGAI” কে বাস্তবায়িত করতে হলে পরিবর্তন কে স্বীকার করতে হবে। তুমি যা চাও সেটার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করো। যদি তুমি আই কি গাই কে অনুসরণ করো তাহলে তুমি ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বে পরিণত হবে। তোমার নিজের আসল আনন্দকে খুঁজে বার করে তাকে প্রতিষ্ঠিত করো। যে সব পথ বা পন্থা তোমাকে পরম আনন্দ দেয় সেগুলি খুঁজে বের করে তাকে ফলপ্রসূ করো। তারা তোমায় অনেক আগে নিয়ে যাবে।

 

নিজের মনমতো জীবন অতিবাহিত করতে না পারা টা একটি রোগ। সেই রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে।

দয়া বা সহানুভূতি দেখানো অথবা ব্যায়াম করা, ধ্যান, মনন, করা এসব তোমার বাড়ির বিল বা খাদ্যের যোগান দেয় না। কিন্তু এটাও জানতে হবে শুধু টাকা থাকলেই জীবন সফল বা আনন্দ দায়ক হয় না।

 

জীবনের কল্যাণ তখনই হবে যখন নিচের দেওয়া আটটি জিনিস কে উন্নত  করতে পারবে। সেগুলি হলো :-

১)দয়াভাব

২)প্রতিনিয়ত শারীরিক ব্যায়াম

৩)সমাজের সাথে সুসম্পর্ক

৪)দৈনিক ধ্যান যোগ

৫)সময়ানুবর্তিতা এবং প্রয়োগ

৬)শান্তিপূর্ণ ঘুম

৭)দৈনন্দিন কাজের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন

৮)ভবিষ্যতে কি হবে বা করবে তার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলা।

 

এসবই হলো আনন্দের কারণ। শুধু টাকা দিয়ে আনন্দ কে খুঁজে পাওয়া কঠিন

 সময়ের মূল্য জানতে হবে।যদি তুমি সময়ের মূল্য বুঝতে পেরেছো তাহলে এটা নিশ্চিত যে তুমি জীবনে কি করতে চাও সেই লক্ষ্য সম্বন্ধে তুমি জানো।

 

কখনো ভেবো না যে তোমার প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য তোমার সময় নেই। আর যদি তুমি তোমার কাছে অনেক সময় আছে,  এবং এই ভেবে সময় নষ্ট করছো, তাহলে এটা স্পষ্ট যে তুমি সময়ের সঠিক প্রয়োগ জানো না।

সাইমন সাইনেক তাঁর বই "স্টার্ট উইথ হোয়াই" তে এই বিষয় কেই গুরুত্ব দিয়েছেন। তুমি যা কিছুই করো সেটা কেন করবে তার কারণ জানা দরকার। উদ্দেশ্যহীন কাজ এর কোনো মূল্য নেই।

আরেককটা কথা কখনো ভেবো না যে ভাগ্য তোমার প্রতিকূলে গিয়ে বাধা দিচ্ছে, এটা ভাবা ভুল। একটি মূর্তি তৈরি করতে গেলে পাথরটিকে কেটে কেটে মূর্তি তৈরি করতে হবে এটা স্বাভাবিক।কর্ম না করে ফললাভ হয় না। জীবন তোমার আগে থেকে অনুকূলে তৈরি নয়। তাকে তোমার অনুকূলে নিয়ে আনার দায়িত্ব তোমার। তোমার জীবন পুঁথি তোমাকে লিখতে হবে। জীবনে তুমি কি করবে ?  তোমার লক্ষ্য কি ?  তোমার পক্ষে কোনটি করা ঠিক কোনটি করা উচিত নয়,  সেসব চিন্তন,  মনন, এবং নির্ণয় তোমাকেই করতে হবে।

 

জীবনে যাঁরা সফল হয়েছেন তাঁদের জীবনের মূল মন্ত্র হলো যে তাঁরা নিজে “AIKIGAI” কে জানতে পেরেছেন এবং তাকে বাস্তবায়িত এবং ফলপ্রসূ করার জন্য কঠোর শ্রম করেছেন।

পরিবার থেকে বাধা অথবা  সহযোগিতা :-যখন তুমি নিজের লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে কাজ করতে চাইবে তখন কখনও কখনও পরিবার থেকে বাধা আসে। তাঁরা তোমাকে অন্যপথে চালিত করতে চায়।এক্ষেত্রে তোমাকেই নির্ণয় করতে হবে তোমার কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়।তোমার জীবনের যাত্রা যেন ব্যাহত না হয়।

বেশির ভাগ মাতা পিতাই নিজের সখ এবং ইচ্ছা কে ছেলের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করতে চান। কিন্তু ছেলের যে নিজস্ব ইচ্ছা এবং অনিচ্ছা আছে সেটার কি হবে ?

যদি তুমি নিজের ইচ্ছায় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও,যদি তুমি নিজে সেই পেশা কে সত্যি ভালোবাসো তাহলে তুমি তোমার “AIKIGAI” কে চিনতে পেরেছো। আর যদি সেটা না হয়ে পরিবারের চাপে সেই পেশা গ্রহণ করছো তাহলে অসুবিধা আছে। 

তোমার কাজ হলো মাতাপিতাকে ভালোবাসা এবং তাঁদের প্রতি দয়াবান থাকা, কিন্তু জীবনে তুমি কি করবে সেই সিদ্ধান্ত তোমার হতে থাকা দরকার।

যদি তোমার স্বাভাবিক দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ হচ্ছে, তাহলে এবার তুমি তোমার “AIKIGAI” এর জন্য কাজ করবে না কেন ?

যদি তোমার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে তাহলে পরবর্তী কাজ হলো তোমার “AIKIGAI” কে ফলপ্রসূ করা। 

মাসলোর পিরামিড স্তর পদ্ধতি:-

মাসলো তাঁর পিরামিড স্তর পদ্ধতি এর মাধ্যমে বুঝিয়েছেন যে মানুষের জীবন শৈলী বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে চালিত হয়।                                

                                                                                


A) প্রথম স্তর:-বস্তুগত প্রয়োজনীয়তা যেমন -খাদ্য জল বায়ু, বাসস্থান, যৌন সুখ ইত্যাদির চাহিদা।

B) দ্বিতীয় স্তর:-নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা। অর্থাৎ সবাই আর্থিক শারীরিক এবং মানসিক দিক থেকে সুরক্ষিত থাকতে চায়।

C) তৃতীয় স্তর:-প্রেম ভালোবাসা সঙ্গীসাথী, পরিবার, বন্ধু এসবের প্রয়োজনীয়তা।

D) চতুর্থ স্তর:- প্রতিদিনের সুখানুভুতি। প্রতিদিনের কিছু প্রাপ্তির অনুভূতি।

E) পঞ্চম স্তর:-নিজের পছন্দ অনুসারে নিজের জীবন কে অতিবাহিত করতে পারা। এখন থেকে আত্মপরিচয় আত্মজ্ঞান,  রচনাত্মক   এবং সৃজনাত্বক মনোবৃত্তি,  আত্মশক্তির বিকাশ এবং সীমাহীন বিকাশের পন্থা।

 

প্রথম চারিটি স্তরের প্রয়োজনীয়তা হলো নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা। এই চারিটি প্রয়োজনীয়তার প্রতিদিন প্রয়োজন আছে। কিন্তু যখন এসবের প্রাপ্তি হয়ে গেলো তখন আর বসে না থেকে নিজের জীবনের যে উদ্দেশ্য আছে তাকে বাস্তবায়িত করতে সক্রিয় হাওয়া আবশ্যক।

যতক্ষন তোমার নিজের প্রথম চারিটি চাহিদা পূরণ না হয়, ততক্ষণ তুমি অধৈর্য  থাকো যদি তুমি খেতে না পাও, যদি তুমি তৃষ্ণার্ত থাকো, তাহলে তুমি উদ্বিঘ্ন থাকবে। যদি তোমার বন্ধু বা কথা বলার কেউ নেই তাহলে তুমি অখুশি থাকবে। যদি প্রতিদিন কিছু প্রাপ্তি না হয়, যদি তোমার আত্মসম্মান না থাকে, তাহলেও তুমি অখুশি হবে। সেই জন্য এইসবের প্রয়োজনে তো প্রতিদিন কাজ করা দরকার, সেটা ঠিক  কিন্তু এর উপরে যে পঞ্চম স্তর আছে সেটি না থাকলে জীবন পরিপূর্ণ হয় না।

আরেকটি কথা খুব গুরুত্বপূর্ণ:-যদি তোমার যা করার ক্ষমতা আছে তার থেকে যদি তুমি কম এবং সহজ কাজ করতে থাকো তাহলে সারা জীবন অখুশি থাকবে।।

 

বরং তোমার যা ক্ষমতা তার থেকে ১০গুন বড় কাজ করবার জন্য লক্ষ্য রাখো। এবং সেই লক্ষ্য কে পূরণ করবার জন্য তৈরি হও এবং সেই লক্ষ্য কে পূরণ করবার জন্য যা দক্ষতা বা ক্ষমতা প্রাপ্তির প্রয়োজন, সেটা পেতে প্রানপন চেষ্টা করো এবং সেই দক্ষতা ও ক্ষমতা অর্জন করে ওই লক্ষ্য কে প্রাপ্তি করো।

এভাবে নতুন নতুন লক্ষ্য রেখে তাকে প্রাপ্তি করতে থাকলে কিছুদিনেই তোমার ক্ষমতা এবং দক্ষতা বাড়তে থাকবে।

অনেকে ভাবেন চাকুর পেয়ে গেলাম, বউ পরিবার পেয়ে গেলাম, এর অর্থ জীবন পরিপূর্ণ হয়ে গেলো, এমনটা নয়। ভেবে দেখো তোমার মূল লক্ষ্য কি ? বা সখ কি? ইচ্ছা কি ?  চাহিদা কি ? তুমি কি সত্যি সত্যি চাকুরী নিয়ে তৃপ্ত? না কোনো বড় এবং মহৎ ইচ্ছা আছে ? যদি থাকে তাহলে তাকে বাস্তবায়িত করতে নেমে পড়ো ।

যখনই তুমি “AIKIGAI” শিখতে যাবে, বা করতে যাবে, তখন মন সেটা করতে চাইবে না। মন সব সময় তার পরিচিতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চায়। কারণ নতুন কিছু জানতে গেলে বা নতুন কিছু করতে গেলে তাকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে, সেটা মন চায় না। সেই জন্যই নতুন কিছু করার আগে অস্বস্তি মনে হয়।

কিন্তু মোদ্দা কথা হলো... যদি নতুন কিছু না করা হয়, তাহলে তোমার বৃদ্ধি কি করে হবে ? সেই অস্বস্তিকে পেরিয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে, তবেই সফলতা আসবে। নতুন কিছু খোঁজা, জানা, শিখতে  পারা এবং প্রতিনিয়ত নতুন মানসিক বিকাশ কে আনন্দ হিসাবে নিতে হবে।

  এক্ষেত্রে যদি করো পরামর্শ বা উপদেশ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে তাঁরই কাছে পরামর্শ নাও যিনি ওই বিষয়ে সফল এবং অভিজ্ঞ। তিনিই আপনাকে পথ প্রদর্শন করতে পারবেন এবং কোনো দ্বিধা বা সন্দেহ থাকলে তাও দূর করতে পারবেন।

কে কোনো ব্যক্তি চাইলে যে কোনো কিছু নতুন জিনিস শিখতে পারেন। তবে তার জন্য তাঁকে সময় দিতে হবে এবং সসম্পূর্ণ মানসিক শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।

শেখার মূল মন্ত্র হলো:-আজ অভ্যাস করো এবং কালকে অভ্যাস করতে আবার এসো।

ধৈর্য থাকতে হবে, এবং তোমার মধ্যে উন্নত হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।

“AIKIGAI”  কে প্রাপ্তির জন্য সময় ত্যাগ এবং আত্মত্যাগ দরকার।“AIKIGAI”  নিয়ে অনেক কাজ করবার আছে।তাই আজ তার কিছুটা করো এবং কালকে আবার কাজ করতে এসো, এমনটা প্রতিদিন দরকার

তোমার প্রতিদিন যে ২৪ ঘন্টা সময় থাকে তাকে তিন অংশে ভাগ করো।-

 

১)আট ঘন্টা সময় প্রতিদিন পারিবারিক দৈনন্দিন প্ৰয়োজনীয়তার কাজে প্রয়োগ করো। এই সময় পরিবারের উপার্জন, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় সম্পর্ক, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হবে।

২)বাকি সময়ের আট ঘন্টা ব্যবহার করো তুমি যা করতে ভালোবাসো সেটাকে বাস্তবায়িত করতে। সেটা এমন কাজ যেটা তোমার করতে খুব ভালো লাগে, যেটা করতে তুমি দক্ষ, এবং যেটা সমাজের কোনো বিশেষ উপকারে আসবে অথবা সমাজের কোনো বিশেষ সমস্যার সমাধান করবে।

তোমার বিনোদন এর সময়কে নিজস্ব বিকাশের কাজে লাগাও।

 ৩)আর বাকি আট ঘন্টা হলো বা ঘুম এবং বিশ্রাম করার জন্য।

 

তোমার জীবনমূল্যের মতো “AIKIGAI” হলো তোমার জীবনের অঙ্গ। আধ্যাত্মিক চিন্তা, পিতা-মাতা র দেওয়া সংস্কার, সুস্থ থাকার লক্ষ্য এই সবকিছু তোমার প্রতিদিনের কার্যশৈলীকে প্রভাবিত করে। এবং তোমার “AIKIGAI”  ও এসবেরই অঙ্গ, আলাদা কিছুই  নয়। 

প্রতিদিন আমাদের মনে 2000 এর বেশি চিন্তন আসে। তার মধ্যে “AIKIGAI” হলো অন্তরাত্মার ডাক। তোমার “AIKIGAI” এর নিয়ে কাজ করবার জন্য তোমাকে তোমার বর্তমান পেশা বা চাকুরী ছাড়তে হবে না। কাজ করতে করতেই তোমার “AIKIGAI” খুঁজে বের করো। আত্মচিন্তন করে দেখোকিছু দক্ষ কাজ তোমার জানা আছে, যা করলে তুমি আনন্দ এবং সন্তুষ্টি দুটোই পাবে।

অর্থপূর্ণ জীবন গঠন করা সহজ সরল নয়। এর জন্য প্রতিদিন  কাজ করতে হয়। তোমার “AIKIGAI”  কে খুঁজে বের করতে হবে এবং তার জন্য তোমাকে কাজ করতে হবে। “AIKIGAI”  কে পূর্ণ রূপ দিতে হবে। প্রতিদিন “AIKIGAI”  কে গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকায় রাখো। প্রতিদিন তোমার “AIKIGAI” এর জন্য কিছু সময় দিলে এবং তার উপর কাজ করলে তুমি খুশি এবং আনন্দ পাবে।

যেটা তুমি ভালোবাসো সেটা করো। যেটা করতে তুমি দক্ষ সেটা করো। আজ শুরু করো,কাজ করো এবং কালকে আবার কাজ করতে এসো।




উপরের এই তথ্য ভালো লাগলে এবং উপকারী মনে হলে অবশ্যই Like  এবং Share করুন।


আরো পড়ুন:Ratan Tata, Mukesh Ambani, Azim Premji, Gandhiji, Mandella, Kalam's Quotes

                      Motivational And Inspirational Quotes For Success

                      Dan Lok's Advice  For Success ,   14 Risks you must take for Success

                      চিন্তন করুন এবং সফল হন ,  কেন করবেন ? সেটা জেনে তবেই কাজটি করুন , 

                      জীবনে কম্পাউন্ড ইফেক্ট এর প্রভাব , বাধার মধ্যে দিয়ে পেরিয়েই সফলতা আসে ,

                      অহংকার হলো চরম শত্রু , আত্মজ্ঞান কি , শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সার ,

                     আকর্ষণ সূত্র , সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়বেন না , সফল ব্যক্তিদের 11 টি গুন্ , 

                সফলতার ১০ টি সূত্র , ১০ গুন্ সফল হবেন কিভাবে ?জীবনের আশ্চর্জজনক রহস্য ,

                ছোট ছোট অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বড় লক্ষ্য প্রাপ্তি , 

                মহান ব্যক্তিদের সাতটি অভ্যাস

                ব্যবসার জন্য মুদ্রা লোন PMMY  Loan ,  Inner Engineering by Sadguru Jaggi Vasudev



For Motivational Articles In English visit..... www.badisafalta.com


Post a Comment

0 Comments